আর্মস রুট ৮

এ জিনিস ইন্টারনেট দেখে বানিয়েছি স্যর!

ওই পুলিশকর্তা একা নন, জেলা পুলিশের তাবড় কর্তারাও জানেন, এ জেলায় কখন ও কী যে তিল থেকে তাল হয়ে যায় তা বোঝা বিধাতারও অসাধ্য। 

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯ ০৭:১০
Share:

ছাই দেখলেই উড়িয়ে দেখতে হয়— পুলিশের চাকরিতে ঢোকার বহু আগেই কথাটা শুনেছিলেন তিনি। তার পরে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরে তিনি বলছেন, ‘‘ছাই, ঘুড়ি, তুলো—সবই উড়িয়ে দেখতে হয়, মশাই। মাঝেমধ্যে খুঁড়ে এবং তলিয়েও দেখতে হয়। কারণ, জেলার নাম মুর্শিদাবাদ!’’

Advertisement

ওই পুলিশকর্তা একা নন, জেলা পুলিশের তাবড় কর্তারাও জানেন, এ জেলায় কখন ও কী যে তিল থেকে তাল হয়ে যায় তা বোঝা বিধাতারও অসাধ্য।

মাস কয়েক আগের কথায়। স্থানীয় লোকজন প্রথমে দেখেন একটা আটপৌরে পাইপ পড়ে আছে। কিন্তু কাছে গিয়ে তাঁরা দেখেন, সেই পাইপ থেকে একটা তারও বেরিয়ে আছে।

Advertisement

ব্যস! শুরু হয় হইহই। খবর পেয়ে ডোমকলের বাগডাঙা এলাকায় গিয়ে ওই পাইপ থেকে চমকে উঠছিল পুলিশও। ততক্ষণে আশপাশে শুরু হয়েছে ফিসফাস—

‘এ বাপু কোনও এলেবেলে জিনিস নয়!’

‘বাপের জন্মে এমন বস্তু দেখিনি।’

‘এ নিশ্চয় বাইরে থেকে আমদানি করা।’

কয়েক জন কনস্টেবল আবার পুলিশ কর্তাদের অনুরোধ করেন, ‘‘ধারে কাছে যাবেন না স্যর। কী থেকে কী হয়, কে বলতে পারে!’’

খবর গেল বম্ব স্কোয়াডে। ঘিরে রাখা হল গোটা এলাকা। বম্ব স্কোয়াডের লোকজন এসে সব দেখে জানায়, এ একেবারেই কাঁচা হাতের কাজ। সকেট বোমাকেই অভিনব কৌশলে ব্যবহার করা হয়েছে। তার পরেই স্বস্তির শ্বাস ফেলে থানায় ফেরে পুলিশ।

কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও সেখানে শেষ হল না। এই কৌশল কোথা থেকে আমদানি করা হয়েছে তা নিয়ে ঠান্ডা ঘরে বসেও ঘাম ঝরেছে পুলিশের। আটক যুবককে ‘বাবা, বাছা’ বলে শুরু হয় জেরা। সে ব্যাটা ভাঙে তবু মচকায় না। পরে সে কবুল করে, ‘‘স্যর, নেট ঘেঁটে এ ভাবে বানিয়েছিলাম।’’

এ বারেও চমকে ওঠেন পুলিশের কর্তারা। নেট ঘেঁটে আগ্নেয়াস্ত্র! পুলিশের এক কর্তা সেই যুবকের কাছে এগিয়ে দেন স্মার্টফোন, ‘‘কই, কী ভাবে দেখেছিস, দেখা।’’

ওই যুবকও অনায়াসেই ইন্টারনেট খুলে দেখিয়ে দিল, কী ভাবে, কোথা থেকে সে এই কায়দা শিখেছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘চাকরি জীবনের বড় একটা সময় কাটিয়েছি নদিয়া-মুর্শিদাবাদে। চুল পেকে গেল বোমা আর আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে করতে। তবে এমন বোমা কখনও দেখিনি। তার পরে আবার বলছে, ‘এ জিনিস ইন্টারনেট দেখে বানিয়েছি স্যর।’ কী যুগ পড়ল বলুন তো!’’

এর আগে জলঙ্গির একটি সাইকেল মেরামতির দোকানে হানা দিয়েও চোখ কপালে উঠেছিল পুলিশের। কারণ, সাইকেল মেরামতির আড়ালে সেই ব্যবসায়ী খুলে বসেছিল অস্ত্রের কারবার। ডোমকলেও অস্ত্রের কারখানা খুলেছিল দুই যুবক। পুলিশের একাংশের দাবি, ডোমকল ও ডোমকল লাগোয়া নদিয়ার থানারপাড়া এলাকায় এখনও কিছু লেদ কারখানার আড়ালে তৈরি হয় আগ্নেয়াস্ত্র। ইতিমধ্যে কিছু কারখানায় হানা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোও লিস্টে আছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement