Murshidabad

বাংলা বিশ, দর্শন পড়লে পাক্কা সাতাশ

জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পোস্টার-ফেস্টুনে জোর প্রচার শুরু হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, কলেজে ভর্তির জন্য কেউ টাকা চাইলে তাঁর নাম, মোবাইল নম্বর পুলিশকে জানাতে। সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে মেল আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও সুজাউদ্দিন

বহরমপুর ও ডোমকল শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮ ০১:০৩
Share:

পুলিশের পোস্টার। বহরমপুরে।

কলকাতার আঁচ লেগেছে মুর্শিদাবাদেও!

Advertisement

গত কয়েক দিন ধরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পোস্টার-ফেস্টুনে জোর প্রচার শুরু হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, কলেজে ভর্তির জন্য কেউ টাকা চাইলে তাঁর নাম, মোবাইল নম্বর পুলিশকে জানাতে। সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে মেল আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর। বলা হচ্ছে, অভিযোগকারীর নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে।

গত কয়েক দিন ধরেই কলেজে ভর্তি নিয়ে তোলাবাজির বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলেজে কলেজে ভর্তি নিয়ে শাসক দলের ছাত্র নেতাদের একের পর এক তোলাবাজির ঘটনা প্রকাশ্যে চলে আসায় বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে খোদ তৃণমূল নেত্রীর। তার পর থেকে সক্রিয় ভাবে মাঠে নেমেছে জেলা পুলিশও।

Advertisement

বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিযোগ, রাজ্য জুড়ে ছাত্র ভর্তি করতে নানা দর হেঁকে বসছেন শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতারা। শুধু জায়গার নাম বদলে যাচ্ছে। জুলুমবাজির চিত্রটা রাজ্য জুড়েই কমবেশি একই রকম। কলকাতার মতো মুর্শিদাবাদের কলেজগুলিতেও ভর্তি চক্র সক্রিয় রয়েছে।

বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে সম্প্রতি এক ছাত্রী একটি বিষয়ে সাম্মানিকে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। কলেজ চত্বরে থাকা দাদারা পঞ্চাশ হাজার টাকা চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। কিন্তু ওই ছাত্রী অনার্সে ভর্তি না হয়ে পাশকোর্সে ভর্তি হয়েছেন। যদিও কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সুজাতা বাগচী বন্দোপাধ্যায় বলছেন, “আমাদের কাছে এমন কোনও অভিযোগ আসেনি। উপযুক্ত প্রমাণ-সহ পুলিশ বা আমাদের কাছে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তাঁর দাবি, কলেজ গেট সব সময় খোলা থাকছে। পুলিশের নজরদারি আছে। তাছাড়া ভর্তি প্রক্রিয়ার পুরোটাই অনলাইনে হচ্ছে।

বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিযোগ, ভর্তিতে জুলুমবাজি করছে শাসকদলের ছাত্র সংগঠন। মুর্শিদাবাদের কলেজগুলিতে একই ভাবে বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তির জন্য দর কষাকষি হচ্ছে। বিশেষ বিষয়ের জন্য বিশেষ দর হাঁকা হচ্ছে। স্বচ্ছভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া করার জন্য জেলার চারটি মহকুমায় এসডিওদের স্মারকলিপি দিয়েছে এসএফআই।

এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্দীপন দাস বলছেন, “জেলার একাধিক কলেজে বাংলা অনার্সের দাম হাঁকা হচ্ছে ২০ হাজার। দর্শন অনার্সের জন্য ২৭ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে।” ছাত্র পরিষদের মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি খাতুন রাকেশ রওশান বলেন, “টাকার বিনিময়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারা ছাত্র ভর্তি করাচ্ছে। রাজ্যের সর্বত্রই এক ছবি। মুর্শিদাবাদও ব্যতিক্রম নয়।”

যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি ভীষ্মদেব কর্মকার বলছেন, “আমাদের জেলায় কোথাও এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যদি কেউ অর্থের বিনিময়ে ভর্তির চেষ্টা করে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’’

এ দিকে, ভর্তিতে জুলুমবাজি রুখতে রবিবার থেকে মাঠে নেমেছে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ। তারা জেলার বিভিন্ন কলেজ গেট থেকে শুরু করে জনবহুল এলাকায় পোস্টার, ব্যানার দিয়ে ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “জেলার প্রতিটি কলেজ এবং জনবহুল জায়গায় আমরা প্রচার চালাচ্ছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন