চাপা রাগে ফুঁ দিলেন ক্লারা লেমিচ

আসলে একই রোদ্দুর, একই এলেম, একই দশভূজা— শুধু ভূগোলটা কিঞ্চিৎ বদলে গিয়েছে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০০:৪৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

চৌকো প্যাকিং বাক্সটা ঠেলেঠুলে গেটের মুখে এনে একটু ঝুঁকে পড়ে টুপ করে তার উপরে উঠে পড়লেন মহিলা। হাতের তেলো দিয়ে একটা টার্জেনীয় চোঙ বানিয়ে নাকি স্বরে হাঁক পাড়লেন, ‘‘নাঁও উই আর গোয়িং টু স্টপ ওর্য়াকিং...।’’

Advertisement

নিউ ইয়র্কের রাস্তায় গড়িয়ে চলা ছায়া ছায়া দুপুরে ক্লারা লেমিচ জানিয়ে দিলেন, শহরের নিভু নিভু আলো আর দুর্গন্ধে ভরা কাপড় কলগুলোয় আর তাঁরা কাজ করবেন না.... ‘দিজ আগলি ব্যাকড্রপ ব্রিনগস নাথিং বাট আনথেলদিনেস টু আস, সো...।’ চাপা রাগটা গড়িমসি করছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। ধুলো, নাম মাত্র মজুরি, দরজাহীন শৌচাগার— নিউ ইয়র্কের কাপড় কলগুলোর দৈন্য নিয়ে তলে তলে কিছু দিন ধরেই ফুঁসছিলেন মহিলা শ্রমিকেরা। স্বামী-ছেলেপুলে-সংসার সামলে সেই কাপড় কলে কাজ করতে আসা আটপৌরে মহিলাদের নামমাত্র মজুরিতে কাজ করিয়ে নেওয়ার সেই আঁচে ফুঁ দিয়ে ‘ন্যাশনাল উইমেন্স ট্রেড ইউনিয়ন লিগ অফ আমেরিকা’ ১৯০৯ সালে জানিয়ে দিয়েছিল, ঢের হয়েছে, আর নয়, এই নমো নমো মজুরিতে এমন অসুস্থ পরিবেশে আর করবে না মেয়েরা। ক্লারা লেমিচ ছিলেন সেই আন্দোলনের একেবারে সামনের সারিতে। সেই দুপুরে তাঁর হাঁকেই অতঃপর ঝুপ ঝুপ করে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শহরের একের পর এক কাপড়কল। প্রায় হাজার ত্রিশ মহিলা শ্রমিক মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায়, দিন কয়েকের মধ্যেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল নিউইয়র্কের ফ্যাশন স্ট্রিটের প্রায় ৫ কোটি টাকার বস্ত্র ব্যবসা। ঘর-বার সামাল দেওয়া সেই সব ছাপোষা মহিলাদের এমন বুক ভরা সাহস দেখে পরের বছরই ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনটা মার্কিন মুলুকে মেনে নেওয়া হয়েছিল নারী দিবস হিসেবে। ক্লারা লেমিচদের সাফল্যকে সম্মান জানাতে দু’বছর পরে ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, জার্মানিতে ১৯ মার্চ পালন করা হল নারী দিবস। তবে ৮ মার্চ দিনটা পাকাপাকি জায়গা করে নিল ১৯১৭’র বলশেভিক আন্দোলনের সময়ে। এক টুকরো রুটি আর বুক ভরা শান্তির খোঁজে রুশি মহিলাদের দীর্ঘ মিছিল মনে রেখেছিল তামাম বিশ্ব। ঘটনাচক্রে জর্জিয়ান ক্যালেন্ডারে ২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল ৮ মার্চ। সেই থেকে নারীদিবস হিসেবে এ দিনটাতেই পড়েছে নারী দিবসের তকমা।

‘‘তা সে হোক না মেম সাহেব, এক হাঁকে আমরাও পারি গো বিড়ি বাঁধার কাজ বন্ধ করে দিতে’’, মুর্শিদাবাদের অরঙ্গাবাদের হাসিনা বিবির গলায় উষ্মা। বলছেন, ‘‘ঘর-দোর সামলে ছেলে মানুষ করে, বিড়ি বেঁধে আমরাও কি কম যাই গো!’’ শুধু তাই নয়, তাঁর হাঁকে যে সত্যিই থমকে যেতে পারে ঘরে ঘরে বিড়ডি বাঁধাইয়ের কাজ, মেনে নিয়েছেন এলাকার তাবড় বিড়ি ব্যবসায়ীরা। যেমন মেনে নিয়েছেন ফুলিয়ার তাঁতি পাড়ার কারবারিরাও— সুতো ছাড়ানোর আস্ত কাজটাই বন্ধ হয়ে যাবে গো ওঁরা (মহিলারা) হাত গুটিয়ে নিলে!’’ যিনি বলছেন, তাঁর উঠোন জুড়ে মিহি সুতোয় তাঁত বুনে চলেছেন জনা পঞ্চাশ মহিলা।

Advertisement

আসলে একই রোদ্দুর, একই এলেম, একই দশভূজা— শুধু ভূগোলটা কিঞ্চিৎ বদলে গিয়েছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন