ব্রাজিল নেই, কিন্তু ফুটবল তো আছে

কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছেন না। ইটের বদলে পাটকেল ফিরে আসছে। তার পরেও প্রতি দিন জিতছে মানুষের বিশ্বকাপ-উন্মাদনা!প্রাক্তন মোহনবাগানী তথা রানাঘাট স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা কেষ্ট মিত্র বলছেন, “শুধু মেসি বা নেমার দিয়ে আজকের দিনে বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব নয়। শুধু অভিজ্ঞতা দিয়েও হবে না। ফুটবল গায়ে-গতরে খেলা, দমে ঘাটতি হলে কিচ্ছু করার নেই।”

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৮ ০৭:২০
Share:

খুলে ফেলা হচ্ছে ব্রাজিলের পতাকা। শনিবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

কাজানের মাঠে রেফারির লম্বা বাঁশি বাজতেই রিমোট দিয়ে টিভিটা বন্ধ করে ঘরের থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলেন দীপক চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

বাইরে তখন মধ্যরাত। চার দশক ধরে ফুটবল মাঠে বাঁশি দিয়ে বেড়ানো মানুষটার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল, বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের ছিটকে গিয়েছে। শনিবার বিকেলে নবদ্বীপ স্টেডিয়ামের মাঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “ধুর, বাকি খেলা আর দেখবই না! ব্রাজিল ছাড়া বিশ্বকাপ হয় নাকি?”

শুক্রবার বাকি রাতটুকু ভাল করে ঘুমোতে পারেননি কৃষ্ণনগরের ব্রাজিল সমর্থক দুলাল মণ্ডলও। সকাল উঠতেই আবার নাতি অধিরাজের নিখুঁত প্লেসিং— “কি দাদাই, তোমার দলও তো গেল!” আসলে আর্জেন্টিনা বিদায় নেওয়া ইস্তক দুলাল নাতিকে সমানে বলে আসছিলেন “দাদুভাই, এখনও সময় আছে, আমার দলে চলে আয়!” কাউন্টার অ্যাটাকে যেতে তাই দেরি করেনি মেসি-ভক্ত নাতি। অন্য খেলাগুলোর মতোই দল বেঁধে বসে নিজস্ব জায়ান্ট স্ক্রিনে ব্রাজিল-বেলজিয়াম ম্যাচ দেখছিলেন কল্যাণী টাউন ক্লাবের সদস্যেরা। অন্য দিন ম্যাচ শেষ হওয়ার পর তর্কবিতর্ক গমগম করে ওঠে। শুক্রবার শুধুই হা-হুতাশ আর আক্ষেপ। মেসি-ভক্তদের হাড়-জ্বালানো টিপ্পনীতেও তেড়েফুঁড়ে ওঠা নেই। সপ্তাহান্তের বিষণ্ণ সকালে রাস্তার উপরে জোলো হাওয়ায় দোল খেয়েছে সবুজের মধ্যে হলুদ চৌকো— ব্রাজিলের পতাকা। কোথাও-কোথাও খুলেও ফেলেছেন মনমরা সমর্থকেরা। শনিবার হয়ে গেল আরও দু’টো কোয়ার্টার ফাইনাল। তা নিয়েও যেন কারও কোনও উৎসাহ নেই। ও পাশ থেকে ফ্রান্স উঠেছে, তাতেই বা কার কী? ব্রাজিলের মুখোমুখি কে পড়বে, সেই হিসেবটাই তো করতে হচ্ছে না।

Advertisement

আর তো মাত্র তিনটে ম্যাচ। দু’টো সেমিফাইনাল আর ফাইনাল (তৃতীয় স্থানের খেলা কে-ই বা দেখে)। কিন্তু তাতেও যেন উৎসাহ নেই অনেকের। মেসি, নেমার, রোনাল্ডো— বিশ্ব ফুটবলের সেরা মুখেরা অনেকেই বিদায় নিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়। কেউ বলছেন ‘অঘটনের বিশ্বকাপ’। কেউ আবার নানা যুক্তি সাজাচ্ছেন প্রিয় দল বা খেলোয়াড়ের ব্যর্থতা নিয়ে। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না। ইটের বদলে পাটকেল ফিরে আসছে।

প্রাক্তন মোহনবাগানী তথা রানাঘাট স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা কেষ্ট মিত্র বলছেন, “শুধু মেসি বা নেমার দিয়ে আজকের দিনে বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব নয়। শুধু অভিজ্ঞতা দিয়েও হবে না। ফুটবল গায়ে-গতরে খেলা, দমে ঘাটতি হলে কিচ্ছু করার নেই।”

কৃষ্ণনগর তরুণ সঙ্ঘের সম্পাদক কৌশিক মণ্ডল বলছেন, “আমরা যারা মারাদোনা দেখে বড় হয়েছি, তারা তো আর্জেন্টিনা ভক্ত হবই। আমাদের আগের প্রজন্ম ব্রাজিল ভক্ত। ক্লাবে অবশ্য ভাগটা আধাআধি। কিছু কিছু জার্মানির সমর্থকও ইদানীং দেখছি। সবাই তো চলে গেল। এ বার যে জিতবে জিতুক!” কল্যাণী টাউন ক্লাবের কর্তা কৌশিক ঘোষ কিন্তু বলছেন, “কয়েক জন তারকা ব্যর্থ হয়েছে বলে এত হাহাকারের কী আছে! বরং কত নতুন খেলোয়াড় চমকে দেওয়ার মতো খেলল, কতো ছোট দেশ শাসন করল তাবড় শক্তিধর দেশগুলোকে। এটাই প্রাপ্তি। না হলে আর কিসের বিশ্বকাপ!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন