FIFA World Cup 2022

মেসি, নেমারদের স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে, ইয়াজুদ্দিনের গর্বে গর্বিত করিমপুর

বাড়তি রোজগারের আশায় মুম্বই থেকে দোহা পাড়ি দিয়েছিলেন পেশায় রং মিস্ত্রি ইয়াজুদ্দিন। কিন্তু কাতারে পৌঁছে প্রাথমিক ভাবে অত্যন্ত অভাবের মধ্যে দিয়ে কাটাতে হয়েছিল। সে সবই এখন অতীত।

Advertisement

প্রণয় ঘোষ

করিমপুর শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২২ ১৬:৩৭
Share:

কাতারের দোহার খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণে নদিয়ার তরুণ। — নিজস্ব ছবি।

কাতারে বিশ্বকাপে মেসি, নেমারদের স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যে দল, তার অন্যতম এক বাঙালি! নদিয়ার তেহট্টের করিমপুর থানার কিশোরপুর গ্রামের ইয়াজুদ্দিন মণ্ডল। আপাতত কাতারের মোট ৮টি স্টেডিয়ামের মধ্যে খলিফা ইন্টারন্যাশনাল, লুসে ইল, আল বায়াত এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে করিমপুরের ইয়াজুদ্দিনের দল।

Advertisement

২০১৯ থেকেই আল খলিফা স্টেডিয়ামের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব ছিল ইয়াজুদ্দিনের দলের উপর। তাঁদের সংস্থা পরবর্তী সময়ে মোট ৪টি স্টেডিয়ামের দায়িত্ব পায়, ফলে দায়িত্ব বাড়ে লিয়াজুদ্দিনেরও। আল হায়াত নামে একটি সংস্থা ৪৮,৫৭০ আসন বিশিষ্ট খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পায় ২০১৯ সালে। কাতারের অপেক্ষাকৃত সাধারণ স্টেডিয়ামকে বিশ্বকাপের মতো সর্ববৃহৎ মঞ্চের জন্য প্রস্তুত করতে ঘাম ঝরিয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিক। গোটা কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন চার ভারতীয়। যাঁদের অন্যতম ইয়াজুদ্দিন। এই সংস্থার প্রধান বাস্তুকার মহম্মদ ইউসুফ আল বিন জানিয়েছেন, ‘‘প্রথম দিকে রঙের মিস্ত্রি হিসেবে ইয়াজুদ্দিনকে নেওয়া হয়েছিল। ওঁর কর্মদক্ষতার কারণে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সুনামের সঙ্গে সেই দায়িত্বও পালন করছেন।’’

পেশায় রংমিস্ত্রি ইয়াজুদ্দিন। অভাবের কারণে পড়াশুনা বিশেষ এগোয়নি। স্কুলের পাঠ চুকিয়ে রুজির টানে স্কুলের ব্যাগেই জামাকাপড় ভরে পাড়ি দেন মুম্বই। সেখানে প্রথমে রং মিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন। ৩ বছর কাজ করার পর মিস্ত্রি হিসাবে সুনাম অর্জন করেন ইয়াজুদ্দিন। বাড়তি মজুরির আশায় পাসপোর্ট এবং ওয়ার্ক ভিসা বানিয়ে পাড়ি দেন কাতার। কাতারে পৌঁছেও সমস্যা পিছু ছাড়েনি নদিয়ার যুবকের। নিদারুণ অর্থকষ্টে কেটেছে প্রথম একটা মাস। প্রথমে সেখানকার একটি খেজুর বাগান পরিচর্যার কাজ পান। কিছু দিন পর থেকে স্থানীয় একটি সংস্থায় রং মিস্ত্রির কাজও শুরু করেন। নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতেই রকেটগতিতে উত্থান ইয়াজুদ্দিনের। ২০১৯-এ কাতারের ৪টি ফুটবল স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের ভার পায় ইয়াজুদ্দিনের সংস্থা। সেই থেকেই খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের দায়িত্বে নদিয়ার যুবক।

Advertisement

লিয়াজুদ্দিনের ছোট বেলার বন্ধু খালেক মণ্ডল বলেন, “পৃথিবীর তাবড় তাবড় মহা তারকাদের সঙ্গে টিভিতে যখন বন্ধুকে ফুটবল মাঠে দেখি, খুব আনন্দ হয়। টিভিতে যখন খেলা সম্প্রচার হয়, ক্যামেরা ইয়াজের দিকে প্যান করলেই গর্বে বুক ভরে ওঠে।’’ ইয়াজুদ্দিনেরই পাড়ার প্রবীণ শিক্ষক ক্ষিতীশ ঘোষ বলেন, ‘‘সবাই ডাক্তার, মাস্টার হবে এমন কোনও কথা নেই। নিজের কর্মদক্ষতার জোরে ইয়াজুদ্দিন আমাদের গর্বিত করেছে।’’

আর ইয়াজুদ্দিন নিজে বলছেন, ‘‘পড়াশোনা করতে পারিনি বেশি দূর। তা নিয়ে কাউকে অভিযোগ না করে যেটুকু শিখেছি, আমার মধ্যে যে ক্ষমতা আছে তাকে যতটা সম্ভব ব্যবহার করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার নামই হচ্ছে আসল শিক্ষা। তবুও দুঃখ হয় এক-দেড় বছর পরে বাড়ি ফিরতে পাই। এই প্রজন্মকে বলব, ডিগ্রির ঝুলি না বাড়িয়ে কর্মদক্ষতায় জোর দাও, দুনিয়ায় কাজের অভাব নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন