Vande Bharat Express

মালগাড়ির চালককে বন্দে ভারতের উদ্বোধনী চালক বলে প্রচার! চাকরি যাওয়ার ভয়ে ভীত নদিয়ার শুভেন্দু

ঘটনা এবং রটনার মধ্যে ফারাক থাকে বিস্তর। কিন্তু নেটাগরিকরা আর কবে সে সবের তোয়াক্কা করেন। তাঁদের ভুলের মাশুল গোনার আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘শোকজের মুখে পড়ব হয়তো। কী যে হবে!’’

Advertisement

প্রণয় ঘোষ

চাকদহ শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:০১
Share:

এই ছবি তুলেই ফাঁপরে পড়েছেন চাকদহের লোকো পাইলট। —নিজস্ব চিত্র।

গতি, বিভ্রান্তি, ভীতি— এই তিনের ঘূর্ণিপাকে আটকে পড়েছেন তিনি। অবস্থা এমন যে কোনও অচেনা নম্বর থেকে ফোন ধরতেও ভয় পাচ্ছেন। শখ করে তোলা একটি ছবি যে তাঁর জীবনে এমন সমস্যা ডেকে আনবে তা সুদূর কল্পনাতেও ছিল না মালগাড়ির চালক শুভেন্দুর বড়াইয়ের। ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের বাঙালি চালক’ বলে তাঁর ছবি-সহ পরিচয় ঘুরছে সমাজমাধ্যমে। আর ৩৭ বছরের যুবক পড়েছেন চাকরি হারানোর দুশ্চিন্তায়।

Advertisement

হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের প্রথম চালক নদিয়ার চাকদহের বাসিন্দা শুভেন্দু বড়াই— এই মর্মে একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। সঙ্গে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সামনে হাসিমুখে দাঁড়ানো যুবকের ছবি। ঝড়়ের গতিতে ওই পোস্ট ভাইরাল হচ্ছে। এ সব দেখেশুনে ভীত শুভেন্দু। অত্যন্ত কুণ্ঠার সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস তো দূরের কথা, পেশা জীবনে কোনও দিন যাত্রিবাহী ট্রেনই চালাইনি।’’ তাঁর অজান্তে কী ভাবে এমন ভুল খবর ছড়িয়ে পড়ল, তা তিনি নিজেই জানেন না। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘ট্রেনের থেকে দ্রুত গতিতে কী ভাবে ভুল খবর ছড়িয়ে পড়ল বুঝতে পারছি না। এ কী বিড়ম্বনায় পড়লাম বলুন তো!’’

বহু ক্ষেত্রেই ঘটনা এবং রটনার মধ্যে ফারাক থাকে বিস্তর। কিন্তু নেটাগরিকরা আর কবে সে সবের তোয়াক্কা করেন। তাঁদের ভুলের মাশুল গোনার আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘শোকজের মুখে পড়তে পারি। কী হবে জানি না।’’

Advertisement

৩০ ডিসেম্বর, শুক্রবার হাওড়া স্টেশনের ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রথম বারের মতো যাত্রা শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম এবং দেশের ষষ্ঠ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। এই ট্রেনে চড়া, নিদেনপক্ষে চাক্ষুষ করার জন্য প্রথম দিনে উৎসাহ, কৌতূহলের অন্ত ছিল না মানুষের। হাওড়া স্টেশন থেকে ‘ট্রায়াল রান’ থেকে কারশেডে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত এই ট্রেন নিয়ে মানুষের ভিড় ছিল দেখার মতো। যাত্রীরা তো বটেই রেল দফতরের কর্মীদের মধ্যেও বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সঙ্গে একটি ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যায়। সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে একটি ছবি তুলেছিলেন শুভেন্দু। তার পর সেটি সমাজমাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন। ব্যস! আর দেখে কে।

স্থানীয় কয়েকটি সমাজমাধ্যমও শুভেন্দুকে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের প্রথম বাঙালি চালক হিসেবে দাবি করে খবর করে বসেছে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রচারে বিড়ম্বনায় পড়েছেন এই মালগাড়ির চালক। এখন তাঁর নাজেহাল দশা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায় যে, তিনি যে মালগাড়ির চালক, সেই ছবি তুলেও ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামছে কই!

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা শুভেন্দু ২০১৫ সালে ভারতীয় রেলের হাওড়া ডিভিশনে অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলট হিসাবে কাজে যোগ দেন। পদোন্নতি হয়েছে। এখন তিনি লোকো পাইলট। হাওড়া ডিভিশনের বেশ কয়েকটি রুটে মালগাড়ি চালান তিনি। এখনও পর্যন্ত যাত্রিবাহি ট্রেন চালানোর সুযোগ আসেনি। তিনিও ট্রেনচালক। তবে তাঁর চালানো ট্রেনের গতি থাকে ঘণ্টায় মেরেকেটে ৪০ কিলোমিটার। তাই ১৬০ কিলোমিটার গতিবেগে ছুটে যাওয়া ট্রেন দেখার জন্য তিনিও আর পাঁচজনের মতো উৎসাহী ছিলেন। পেশার কারণে হয়তো একটু বেশিই। কিন্তু তাতেই শুরু হয়েছে বিপত্তি। এমন ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়ায় শুভেন্দু চিন্তিত তাঁর পেশাজীবন নিয়ে। বলেন, ‘‘এমন খবর ছড়ানোর আগে কেউ যাচাই করে দেখবেন তো! কেউ যোগাযোগই করেননি আমার সঙ্গে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন