চিকিৎসায় গাফিলতি, জরিমানা ৬ লক্ষ টাকা

রোগটা যে কি, সেটাই ধরতে পারেননি চিকিৎসক। উপরন্তু, হাত ধুয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন— ‘সেরে গিয়েছে মেয়ে, বাড়ি নিয়ে যান।’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৬
Share:

রোগটা যে কি, সেটাই ধরতে পারেননি চিকিৎসক। উপরন্তু, হাত ধুয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন— ‘সেরে গিয়েছে মেয়ে, বাড়ি নিয়ে যান।’

Advertisement

বাড়ি ফিরে, ব্যাথা কমা তো দূরের কথা, বরং তা বাড়তেই থাকে। আর তার জেরে, শেষতক অস্ত্রোপচারের পরে ছোট্ট মেয়েটির পায়ের হাড় প্রায় ইঞ্চি তিনেক কেটে বাদ দিতে হয়।

সুদীপ্তা বারুই এখন তাই পাকাপাকি পঙ্গু, খুঁড়িয়ে হাঁটে কোনওক্রমে।

Advertisement

চিকিৎসায় এই গাফিলতির জন্য শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ কেসি মোকামিকে অভিযুক্ত ঠাওরে তাঁকে ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল নদিয়া জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।

সোমবার আদালতের জেলা সভাপতি প্রদীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দুই সদস্য রীতা রায়চৌধুরী মালাকার এবং শ্যামল ঘোষের বেঞ্চ ওই রায় দিয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি বাঁ পায়ে থাইয়ে যন্ত্রণা নিয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল কৃষ্ণনগরের গোয়ালদহ-মহিষনাংড়া গ্রামের বাসিন্দা বছর এগারোর সুদীপ্তা। হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষ কেসি মোকানির তত্বাবধানে শুরু হয়েছিল চিকিৎসা। সুদীপ্তার আইনজীবী শুভাশিস রায় জানান, চিকিৎসক কেসি মোকামি জানিয়েছিলেন সেলুলাইটিস হয়েছে। চিকিৎসা জেলা হাসপাতালে সম্ভব নয়। তিনি সুদীপ্তাকে ২ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিজের চেম্বারে চিকিৎসা করাতে বলেন। সেই মত সুদীপ্তার চিকিৎসা শুরু হয়। দিন কয়েক পরে, লিখে দেন— এই যন্ত্রনা আসলে সেলুসাইটিসের জন্য নয়, ওটা আসলে গ্রোথ পেন।

যন্ত্রণা বাড়তে তাকায় এ বার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শুরু হয় চিকিৎসা। সেখানে, চিকিৎসকেরা জানান, সুদীপ্তার অস্ত্রোপচার প্রয়োজন।

পরের গন্তব্য কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতাল। সেখানে অস্থি বিশেষজ্ঞ অরবিন্দ বালাও পরীক্ষা করে সেলুলাইটিসের কথা বলেন।

হয় অস্ত্রোপচার। আর তার পরেই মেয়েটির পায়ের তিন ইঞ্চি হাড় কেটে বাদ দিতে হয়।

লক্ষাধিক টাকা খরচ হলেও সুদীপ্তা কার্যত ‘পঙ্গু’ হয়ে য়ায় চিকিৎসায় গাফিলতির জন্য।

এরপরই ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই সুদীপ্তার মা নমিতাদেবী ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে কেসি মোকামি ও অরবিন্দ বারুই-সহ কল্যাণীর ওই বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে মোট ৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ক্ষতিপুরণ চেয়ে মামলা করেন। সোমবার অবশ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বেঞ্চ শুধু মাত্র কে সি মোকামিকেই দোষি সাব্যস্ত করে ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণের নির্দেশ দেন।

চিকিতসক অরবিন্দ বালার আইনজীবা কাজল ঘোষ ও প্রদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম যে অরবিন্দ বালার কোন গাফিলতি নেই। বরং তার জন্যই আরও বড় কোন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেল মেয়েটি।” আর, কৃষ্ণচন্দ্র মোকামী বলেন, “এটা আদালতের রায়। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কোনও প্রতিনিধির কাছে মন্তব্য করব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন