প্রতীকী ছবি।
দিনভর মুখভার আকাশের। মঙ্গলবার সারা দিন বৃষ্টির মধ্যেই চাপা মনখারাপটা লুকিয়ে রেখেছিল বাগানেপাড়া। সেটাই ঠেলে বেরিয়ে এল সন্ধ্যার পরে। সত্যেন আর তাঁর স্ত্রী গীতার উপরে ক্ষোভ উগড়ে দেওয়া চোখগুলোয় তখন জল। তাঁদের ছেলে-মেয়ের জন্য। বাবা-মা কেউই নেই বাড়িতে। কিন্তু দুই ভাই-বোনের শেষকৃত্যের যাবতীয় দায়ভার নিজেদের কাঁধেই তুলে নিলেন এলাকার বাসিন্দারা।
খবরটা এলাকায় পৌঁছে ছিল সোমবার রাতেই। বাড়িতে বিষ খেয়ে পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে সত্যেনের দুই ছেলে-মেয়ের। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্ত্রী এবং ছোট ছেলে। তাঁর আগেই অবশ্য নিজের মাকে খুনের অভিযোগে সত্যেনকে গ্রেফতার করেছে শান্তিপুর থানার পুলিশ। গোটা ঘটনায় সত্যেন আর তাঁর স্ত্রীকে কাঠগড়ায় তুললেও এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই কিন্তু তাঁদের ছেলে-মেয়ের মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। বাবা-মায়ের উপরে যতই ক্ষোভ থাকুক না কেন, ১৭ বছরের রিমা আর ১২ বছরের সুদীপের মৃত্যুতে রীতিমতো মুষড়ে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারাও।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাই প্রতীক্ষা ছিল দেহ ফেরার। মঙ্গলবার রাতে প্রায় আটটা নাগাদ দুই ভাই-বোনের নিথর দেহ ফেরে শান্তিপুরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাগানেপাড়ার বাড়িতে। মৃত দুই সন্তানের মা হাসপাতালে, বাবা পুলিশ হেফাজতে। দু’জনের কাউকেই তখনও জানানো হয়নি ছেলে-মেয়ের মৃত্যুসংবাদ। তবে রিমা আর সুদীপের দেহ শেষ বারের মতো বাড়িতে ফিরলে অবহেলা হয়নি। এগিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। নিজেরাই সাধ্যমতো টাকা তুলে তাদের সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সত্যেনের জনা কয়েক আত্মীয়ও। বাড়ি থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় শান্তিপুর শ্মশানে। সেখানেই শেষকৃত্য হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রতাপ বিশ্বাস, সঞ্জয় বিশ্বাসেরা বলছেন, “বাচ্চাগুলো তো কোনও দোষ করেনি। এভাবে ওদের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। ছোটবেলা থেকেই তো ওদেরকে এখানে দেখেছি। এমন দিন দেখতে হবে ভাবিনি।’’