কয়েক বছরের লাগাতার চেষ্টা সত্ত্বেও জেলা জুড়ে রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে শিশুদের অপুষ্টি। প্রশাসনের নিজের হিসেবেই, মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা হাজারেরও বেশি। তুলনায় কম অপুষ্টির শিকার শিশুরা তো রয়েইছে।
এই পরিস্থিতিতে লাগাম টানতে অপুষ্ট শিশুদের বাড়তি পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বহরমপুরের হাতিনগর পঞ্চায়েতে এই প্রকল্পের সূচনা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলায় মোট ৮৬৭১টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে, যারা ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশু ও প্রসূতিদের দেখভাল করে। ২৬টি ব্লক ও সাত পুরসভা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ শিশু রয়েছে তাদের আওতায়।
এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে ওজন অনুযায়ী শিশুদের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে— সবুজ, হলুদ ও লাল। সবুজ শিশুদের পুষ্টিজনিত কোনও সমস্যা নেই। হলুদ শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি আছে। লাল শিশু মানে যাদের পুষ্টির ঘাটতি মারাত্মক।
২০১৩ সালের অগস্টের সরকারি তথ্য বলছে, ওই সময়ে জেলায় লাল শিশুর সংখ্যা ছিল ৯২৪৭। সবচেয়ে দুর্দশা ছিল ফরাক্কা, হরিহরপাড়া, নওদার মত কয়েকটি ব্লকের। ওই সব এলাকায় শিশুদের বাড়তি খাবার হিসেবে ছোলা ও যবের ছাতুর সঙ্গে চিনি মিশিয়ে এক বিশেষ ধরনের লাড্ডুর টিফিন দেওয়া হতে থাকে। বছর ঘুরতেই সংখ্যাটা এক ধাক্কায় ৪০৯৯-এ নেমে আসে।
অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের জেলা আধিকারিক সুমিত চক্রবর্তী জানান, পরিবারের সাধ্য মতো বাড়ির খাবার পায় শিশুরা। বাড়তি হিসেবে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র অর্ধেক ডিম আর থেকে সব্জি মেশানো খিচুড়ি দেওয়া হয় সবাইকে। ছাতুর লাড্ডু ছিলই। তার সঙ্গে লাল শিশুদের জন্য গোটা ডিম বরাদ্দৃ। এ বছর জানুয়ারিতে ফের পরীক্ষা করে যে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে, তা অনুযায়ী লাল শিশুর সংখ্যা ১০৫১।
শিশুস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার কো-অর্ডিনেটর জয়ন্ত চৌধুরীর মতে, এই ভাবে লালা শিশুর সংখ্যা কমানো সম্ভব হয়েছে একটা নিয়মের পরিবর্তনে। আগে শিশুরা অনেকেই খাবার নিয়ে বাড়ি চলে যেত এবং তা আখেরে কতটা তাদের বরাতে জুটত, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এখন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নজরদারি বাড়িয়ে শিশুদের সেখানে বসিয়ে খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে। ফলে পুরো বরাদ্দই তাদের পেটে যাচ্ছে। তা ছাড়া, অধিকাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পরিবেশ আগের চেয়ে কিছুটা স্বাস্থ্যকর হয়েছে।
এ বার নতুন ব্যবস্থায় বেশি অপুষ্ট শিশুদের প্যাকেটজাত খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। তা রান্না করে, সরবত করে বা লাড্ডুর মতো করে খাওয়ানো যাবে। জেলার ২৬টি ব্লকের সর্বত্র অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সে ব্যাপারে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকেই।
জেলায় লাল শিশুর সংখ্যা এখনও সবচেয়ে বেশি সুতি ১ ব্লকে — ৯১ জন। তাই আজ, শুক্রবার ওই ব্লকে বৈষ্ণবডাঙা গ্রামে ওই শিশুদের এনে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর পদ্ধতি শেখানো হবে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও মায়েদের। তার জন্য সেখানে ১২৩৪ প্যাকেট খাবার পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বাড়চি খরচের জন্য বাড়তি টাকা কোথা থেকে আসছে?
সুমিতবাবু জানান, অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পে প্রতি বছরই বরাদ্দ টাকা অল্প-অল্প করে জমেছে। বর্তমানে অঙ্কটা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকায়। তিনি বলেন, ‘‘লাল শিশুদের অপুষ্টি কাটানোর জন্য ওই তহবিল কাজে লাগানোর আর্জি জানানো হয়েছিল জেলাশাসকের কাছে।” সবুজ সঙ্কেত মিলতেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।