নিজস্ব চিত্র।
এ এক আজব গ্যাঁড়াকল!
‘নির্মল জেলা’ হয়ে উঠতে চাইছে মুর্শিদাবাদ, বাদ সাধছে প্রকৃতি। জেলা প্রশাসনের দাবি, প্রায় ৯৯ শতাংশ শৌচালয় তৈরির কাজ শেষ। সব কিছু ঠিকঠাক চললে এ মাসের মধ্যেই মুর্শিদাবাদকে ‘নির্মল’ বলে ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু সামনে ‘কালাপাহাড়’ হয়ে দাঁড়িয়েছে পাথর!
ঝাড়খণ্ড লাগোয়া সামশেরগঞ্জের ভাসাই পাইকর এলাকায় অদ্বৈতনগর গ্রামে ক’হাত মাটি খুঁড়লেই ঠং করে গাঁইতি ঠেকছে পাথরে। তার পর আর খোঁড়া যাচ্ছে না। শৌচাগার তবে হবে কোথায়! ফলে তীরে এসেও পাথরে ঠোক্কর খাচ্ছে কর্তাদের তরী।
জেলাশাসক পি উলগানাথনের কথাতেই ধরা পড়ছে হতাশা, “ গোটা গ্রামটাই পাথরের উপরে। এক-দেড় ফুট ল্যাটেরাইট মাটি খুঁড়লেই বেরিয়ে পড়ছে পাথরের চাদর। তা আর কাটা যাচ্ছে না।’’ ফলে, ওই গ্রামের প্রায় ৫০৮টি পরিবারের শৌচালয় তৈরি করা যায়নি। তাঁরা এখনও সকাল হলেই মাঠেঘাটে ছুটছেন।
ভাসাইপাইকর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, অদ্বৈতনগর গ্রামের আব্দুল গফুর বলেন, “গ্রামটা একটা টিলার উপরে। পানীয় জল থেকে শুরু করে শৌচালয় তৈরি, সবেতেই সমস্যা।” ঝাড়খণ্ডের পাকুড় জেলা লাগোয়া ওই গ্রামে মুর্শিদাবাদ থেকে যেতে হয় পাকুড় হয়েই। ৬৩৯টি পরিবারের বাস। তার মধ্যে ১৩৩টির শৌচালয় আছে। তারা তবে করল কী করে?
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, তার জন্য ভিত করার সময়ে হয় মাটি দিয়ে আট-দশ ফুট উঁচু ভিত করতে হয় অথবা মোটা টাকা খরচ করে পাথর কাটাতে হয়। বেশির ভাগ লোকেরই সেই সামর্থ্য নেই। তাঁরাই পড়েছেন আতান্তরে। ‘মিশন নির্মল বাংলা’য় সেপটিক ট্যাঙ্কের জন্য চার ফুট গর্ত (লিচপিট) গর্ত করতে হয়। সেটিই জল শোষণ করে নেয়। তার জন্য সরকার ১০ হাজার টাকা ভর্তুকি দেয়, প্রাপককে দিতে হয় ৯০০ টাকা। কিন্তু ‘লিচপিট’ তৈরির রাস্তাই বের করতে পারছে না প্রশাসন।
এখন উপায়?
জেলাশাসক বলেন, ‘‘ওই গ্রামে বায়োটয়লেট বা অনেকের ব্যবহার্য কমিউনিটি টয়লেট করার কথা ভাবা হয়েছে।” এ ছাড়া, একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে এলাকায় পাঠানো হয়েছিল। সেখানে শৌচালয় কী ভাবে হতে পারে, তারাও খতিয়ে দেখছে।
‘বায়োটয়লেট’ মানে যেখানে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ছাড়া থাকে, যারা বর্জ্যকে ভেঙে গ্যাস ও জলে পরিণত করে। কিন্তু তেমন শৌচাগার করতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ। সেই বাড়তি টাকা কোথা থেকে আসবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে রাজ্যকে সব জানিয়েছে। উপরতলার অনুমোদন পেলে ওই ধরনের শৌচালয় তৈরি করতে অন্তত আরও এক মাস সময় লাগবে।
নাক-উঁচোনো পাথরেই কর্তাদের নির্মল-সাধ হোঁচট খাবে না তো?