এক জন মা-ও যেন বাড়িতে সন্তান প্রসব না করেন— এটাই লক্ষ্য।
লক্ষ্য হল, একশো শতাংশ প্রসূতি যাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে এসে প্রসব করেন, তা নিশ্চিত করা।
তাই এ বার থেকে বাড়ির আঁতুড়ে শিশু জন্মালেই জবাবদিহি করতে হবে আশাকর্মী এবং স্বাস্থ্য সহায়িকাদের। সন্তোষজনক জবাব না মিললে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাল্যবিবাহ রোখা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একশো শতাংশ সন্তান প্রসব নিশ্চিত করতে সোমবার কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্র ভবনে মহকুমাস্তরের বৈঠক হয়। জানা যায়, নদিয়ায় আড়াই শতাংশ প্রসূতি এখনও বাড়িতে প্রসব করেন। আগের চেয়ে হার কমলেও এই অভ্যাস নির্মূল করা যায়নি। বৈঠকে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “গর্ভবতীদের হাসপাতালমুখী করার দায়িত্বে রয়েছেন আশাকর্মী এবং স্বাস্থ্য সহায়িকারা। সে কারণে কেউ বাড়িতে সন্তান প্রসব করলে তাঁদেরই শো-কজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এ দিন বৈঠকে জেলাশাসক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছাড়া কৃষ্ণনগর মহকুমার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সহায়িকা, আশাকর্মী, বিডিও, সিডিপিও, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকেরাও (বিএমওএইচ) উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ সালে নদিয়ার চার শতাংশ প্রসূতি বাড়িতে সন্তান প্রসব করতেন। ২০১৫-১৬ সালে তা কমে আড়াই শতাংশে নেমেছে। স্বাস্থ্য দফতর চাইছে তা শূন্যে নামিয়ে নিয়ে যেতে। কাজটা যে সহজ নয়, সেই ধারণা সকলেরই আছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন চাপ বাড়াতে চাইছে।
জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত জানান, “আশাকর্মী ও স্বাস্থ্য সহায়িকারা তো গর্ভবতী মায়েদের সচেতন করার জন্য রয়েছেন। তাই বাড়িতে সন্তান প্রসব করলেই তাঁদের শো-কজ করা হবে। বাল্যবিবাহ রুখতে আমরা পুরোহিত এবং ইমাম-মোয়াজ্জেনদের কাজে লাগাব। তাঁদের নিয়েও বৈঠক হবে।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, যে সব এলাকায় আশাকর্মী নেই, সেখানে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাধ্যমে প্রসূতিদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনার ব্যবস্থা হচ্ছে। সচেতন করে হাসপাতালে আনতে পারলে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের প্রসূতি-পিছু ২০০ টাকা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট বলছে, নদিয়া জেলায় ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন প্রায় ২৬ শতাংশ প্রসূতি। নাবালিকাদের বিয়ে হচ্ছে, তা পরিষ্কার। বাল্যবিবাহ রুখতে পঞ্চায়েত প্রধানদের এগিয়ে আসতে বলা হয় বৈঠকে। আশাকর্মীর অপ্রতুলতা থেকে কিছু জায়গায় যাতয়াতের সমস্যার কথাও ওঠে। কোথাও কোথাও প্রশিক্ষিত ধাইরা প্রসূতিদের হাসপাতালে যেতে বাধা দিচ্ছেন বলেও জানা যায়।
এক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রশ্ন তোলেন, শুধু আশাকর্মী বা স্বাস্থ্য সহায়িকাদের শো-কজ করা হবে? ছাড় পেয়ে যাবেন বিএমওএইচেরা? আশাকর্মী ইউনিয়নের নদিয়া জেলা সম্পাদক অপর্ণা গুহও বলেন, “আশাকর্মীরাও চান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসব করুন মায়েরা। তার পরেও কেউ বাড়িতে প্রসব করলে আমাদের জবাব দিতে হবে কেন?” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘বিএমওএইচ তো মাঠে নেমে কাজ করেন না। তবে প্রয়োজনে তাঁদেরও শো-কজ করা হতে পারে।’’
আগামী ২১ সেপ্টেম্বর তেহট্টে, ২২ তারিখ কল্যাণী ও ২৩ সেপ্টেম্বর রানাঘাটে একই ধরনের বৈঠক হবে বলে জানানো হয়েছে।