ডাক্তার নেই, ভরসা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী

রোগীরা চলে আসেন সাত সকালে। আর আটটা নাগাদ তিনি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকে কালো রঙের চেয়ারটা টেনে তিনি শুরু করেন, ‘‘আবার জ্বর বাধালে কী করে? প্রেসারও তো দেখছি বেড়েছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কান্দি শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:০০
Share:

রোগী দেখছেন গোলাম জিলানি। —নিজস্ব চিত্র

রোগীরা চলে আসেন সাত সকালে। আর আটটা নাগাদ তিনি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকে কালো রঙের চেয়ারটা টেনে তিনি শুরু করেন, ‘‘আবার জ্বর বাধালে কী করে? প্রেসারও তো দেখছি বেড়েছে।’’

Advertisement

টেবিলের ও প্রান্তে বসে নয়দাপাড়া থেকে আসা প্রৌঢ়ও বলে চলেন, ‘‘ও ডাক্তার, যা করার তুমিই করো বাপু। সদর-টদরে যেতে পারব না। দাও দেখি কড়া ডোজের দু’টি ওষুধ।’’

মুচকি হাসেন মহম্মদ গোলাম জিলানি। নাড়ি দেখা শেষ হলে তিনি প্রেসক্রিপশনে কয়েকটি ওষুধের নাম লেখেন। তারপর কিছু ওষুধ তিনি আলমারি থেকে বের করে দেন রোগীকে। তারপর হাঁক দেন—‘‘কই, পরের জন চলে আসুন।’’

Advertisement

সকাল আটটা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত এ ভাবেই রোগী দেখেন ভরতপুরের জজান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, গোলাম জিলানি। আশপাশের প্রায় পনেরোটি গ্রামের কাছে তিনিই এখন ‘ডাক্তার’। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাকাপোক্ত ভবন আছে। ওষুধ আছে। রোগীও আছে। কিন্তু চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। নেই নার্স, ফার্মাসিস্ট, সাফাইকর্মী কেউই। সবেধন নীলমনি গোলাম তাই এখন অগতির গতি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর পাঁচেক আগেও এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চেহারা এমন হতশ্রী ছিল না। সবসময় পাওয়া যেত চিকিৎসক ও নার্সকে। কিন্তু তারপর থেকে নেই-এর তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হতে শুরু করল। খাতায়-কলমে এখন একজন চিকিৎসক আছেন। সপ্তাহে তাঁর চার দিন আসার কথা। কিন্তু তিনিও বেশির ভাগ দিন আসেন না বলেই অভিযোগ।

নয়দাপাড়ার সীমান্ত মণ্ডল, মাহাদিয়ার নন্দিতা মণ্ডলেরা বলছেন, ‘‘ডাক্তারের দেখা না পেয়ে কতদিন ঘুরে গিয়েছি। এখন গোলাম ডাক্তারের ওষুধেই তো বেঁচেবর্তে আছি।’’ বড়ঞার বিধায়ক কংগ্রেসের প্রতিমা রজক বলছেন, ‘‘বিষয়টি জানিয়ে বহু বার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি।’’

চতুর্থ শ্রেণির কর্মী চিকিৎসা করছেন শুনে চমকে উঠেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা। তিনি বলছেন, ‘‘রাজ্য জুড়েই চিকিৎসকের অভাব আছে। তাই বলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রোগী দেখবে এটাও মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।”

আর চতুর্থ শ্রেণির ওই কর্মী গোলাম বলছেন, ‘‘রোগীরা চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে ফিরে যেতেন। ওঁরাই আমাকে বাধ্য করেছেন, রোগ বুঝে ওষুধ দেওয়ার জন্য। আমিও নিরুপায় হয়েই ওদের সাধারণ জ্বরজ্বালার ওষুধ দিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন