Disabled Children

পরিবারে ঠাঁই নেই, হোম না থাকায় ব্রাত্যই ঝিলিকেরা

জন্মের পর থেকেই শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিছানায় পড়ে আছে সে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য নিজের মা তাকে প্রসবের পর হাসপাতালে ফেলে পালিয়েছিলেন।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮ ০৭:০০
Share:

হাসপাতালে রাধে ও ঝিলিক। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে ছোট্ট একটা রেলিং ঘেরা বিছানায় সারা দিন গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকে। কখনও নিজের মনে হেসে ওঠে, আবার খিদে পেলে কাঁদে। কেউ 'ঝিলিক' বলে ডাকলেই ঘাড়টা ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করে। সেরিব্রাল পলসি আক্রান্ত শরীরটা নাড়াতে অসুবিধা হয়। দৃষ্টিও এত ক্ষীণ যে, চেনা মানুষকে চিনতে অনেক সময় লাগে।

Advertisement

জন্মের পর থেকেই শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিছানায় পড়ে আছে সে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য নিজের মা তাকে প্রসবের পর হাসপাতালে ফেলে পালিয়েছিলেন। এসএনসিইউ-এ প্রায় এক মাস যমে-মানুষে টানাটানির পর বেঁচে যায় ঝিলিক। মা-হারা ঝিলিককে বুকে টেনে নেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অন্য কর্মীরা। এখন তার বয়স সাড়ে তিন বছর।

বছর খানেক আগে তার সঙ্গে জুটেছে বছর দশেকের রাধে। শান্তিপুরের নিষিদ্ধপল্লিতে তাকেও ফেলে গিয়েছিলেন তার মা। পুলিশের হাত ঘুরে তারও ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে। রাধের কোমরের নীচ থেকে বাকি অংশ অসাড় জন্ম থেকে। তাকে স্নান করানো, খাওয়ানে, মলমূত্র সাফ করা সব কিছুই করেন হাসপাতালের সাফাই কর্মীরা। খাইয়ে দেন, গল্প করেন নার্সরা। কিন্তু একটা চিন্তা তাঁদের বাড়তেই থাকে। কত দিন হাসপাতালের পরিবেশে বাচ্চা দু’টিকে এই ভাবে রাখা যাবে। তবে কি এখানেই কাটবে তাদের জীবন? বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের যে চিকিৎসা এবং কাউন্সেলিং দরকার তার কিছুই তো পাচ্ছে না ঝিলিক আর রাধে। নিয়মমতো সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত হোমে পাঠানোর কথা পরিবার-হারানো এই শিশুদের। কিন্তু কোনও হোম প্রতিবন্ধী এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের রাখতে রাজি হচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার-বার সমাজকল্যাণ দফতরে, শিশু নিরাপত্তা কমিটিতে আবেদন জানিয়ে ক্লান্ত। প্রতি হোমের একই জবাব, ‘এই ধরনের শিশুদের রাখার ও যত্ন করার পরিকাঠামো তাদের নেই।’

Advertisement

উদ্বিগ্ন হাসপাতাল সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘‘এই শিশুরা পরিবারেও ব্রাত্য, আর প্রশাসনিক স্তরেও এদের বড় হওয়ার পথ সুগম করার তেমন করে পরিকাঠামো নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ওদের সামান্য দেখাশোনা করতে পারি। কিন্তু মানসিক ভাবে ওদের সাহায্য করা, পড়াশোনা শেখানো, কিছুটা আত্মনির্ভর করা, এগুলি করাতে না-পারলে এই ভাবে জড়পদার্থের মতো থাকাটাও তো অস্বাভাবিক যন্ত্রণার। হাসপাতালে থেকে ওরা অন্য সংক্রমণেরও শিকার হতে পারে।’’ শিশু বিভাগের নার্স সুনীপা সরকার, পামেলা কুন্ডুরা জানিয়েছেন, ওইটুকু বিছানায় আর আঁটতে চায় না ঝিলিক আর রাধার শরীর। এক বার তো দু’টি রডের ফাঁকে মাথাটা আটকে গিয়েছিল ঝিলিকের। অনেক কষ্টে বের করা গিয়েছিল। শুধু নদিয়ায় নয়, গোটা রাজ্যে এই ধরনের শিশুদের রাখার মতো হোমের আকাল। খোদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘দু’-একটি হোমে দৃষ্টিহীনদের রাখা হয়। কিন্তু শারিরীক বা বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধীদের জন্য হোমের সত্যিই অভাব। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা তাদের হোমে এই শিশুদের নেয়, কিন্তু তার সংখ্যা খুবই কম।’’

এক বার ঝিলিককে নাকাশিপাড়ার একটি হোমে রাখা হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরিকাঠামোর অভাবের কথা জানিয়ে সেই হোম থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হয়। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সঙ্গে কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন