বাঁশি আর বাজে না, ময়লা জমছে শহরে

সাতসকালে নিয়মিত বাঁশি না বাজলে যে কী হতে পারে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বেলডাঙার মানুষ। ঘুম থেকে উঠে সকালের কাজকর্ম সেরে সকলেই বাঁশির অপেক্ষায় থাকতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৫
Share:

শহরে যেখানে সেখানে এ ভাবে পড়ে থাকছে ময়লা। —নিজস্ব চিত্র

সাতসকালে নিয়মিত বাঁশি না বাজলে যে কী হতে পারে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বেলডাঙার মানুষ। ঘুম থেকে উঠে সকালের কাজকর্ম সেরে সকলেই বাঁশির অপেক্ষায় থাকতেন। কারণ, বাঁশি বাজিয়েই বাড়ির সামনে আবর্জনা সংগ্রহ করতে আসত পুরসভার গাড়ি। কিন্তু জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে সেই বাঁশি আর নিয়মিত বাজছে না বলে অভিযোগ।

Advertisement

যার ফল ভুগতে হচ্ছে তামাম বেলডাঙাকে। বাড়ির সামনে জমছে আবর্জনার স্তূপ। বাড়ছে দূষণ। বেলডাঙা শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী সেন্টু বিশ্বাস। দিন কয়েক আগে তিনি বাড়িতে ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন।

রাতেই এঁটো শালপাতা, গেলাস, আবর্জনা তিনি রেখেছিলেন বাড়ির সামনে। কিন্তু পুরসভার গাড়ি না আসায় আতান্তরে পড়েন তিনি। সেন্টুবাবু বলছেন, ‘‘এ কী বিপদ বলুন তো? পুরসভার গাড়ি না আসায় নিজেকেই সে সব পরিষ্কার করতে হয়েছে। কিন্তু এটা তো আর সমাধান হতে পারে না।’’

Advertisement

একই সমস্যায় ভুগছেন শহরের ছাপাখানা এলাকার বাসিন্দা সবিতা রায়ও। তাঁর কথায়, ‘‘আগে বাঁশি বাজিয়ে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াত পুরসভার গাড়ি। শহর পরিচ্ছন্ন থাকত। কিন্তু গত প্রায় এক মাস থেকে সেই নিয়মে ভাটা পড়েছে। বাড়ির সামনেই জমছে আবর্জনা। দুর্গন্ধে থাকা যাচ্ছে না।’’

১৯৮১ সালে বেলডাঙা পুরসভা হয়। প্রথমে অবশ্য শহরে জঞ্জাল ফেলার জায়গার কোনও অভাব ছিল না। কখনও বাড়ি তৈরির আগে, কখনও কোনও নিচু জমি উঁচু করতে সেই জায়গাতে শহরের জঞ্জাল কিংবা আবর্জনা ফেলত। নিখরচায় সেই জায়গা ভরাট হয়ে যাওয়া ও আবর্জনার গতি হওয়ায় সমস্যা হতো না কোনও পক্ষেরই। কিন্তু শহরে জনবসতি বাড়ায় পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই।

আশপাশে অসংখ্য ঘরবাড়ি হয়ে যাওয়ায় পড়ে থাকা কোনও খাস জমিতেও কেউ নোংরা ফেলতে দিচ্ছেন না। এ দিকে পুরসভার নিজস্ব কোনও ডাম্পিং গ্রাউন্ডও নেই। আর সেই কারণেই জানুয়ারির শেষ দিক থেকে শহরে নিয়মিত আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারছে না পুরসভা।

সমস্যার কথা মানছেন পুর কর্তৃপক্ষও। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে শহরে জনবসতি এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, ফাঁকা জায়গা আর নেই বললেই চলে। ডাম্পিং গ্রাউন্ড করার জন্য জমি পেতেও সমস্যা হচ্ছে। পুরপ্রধান ভরত ঝাওর জানান, গত ৩৫ বছরেও কেউ আবজর্না ফেলার স্থায়ী ব্যবস্থা করেনি। আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে সবাইকে। গত এক মাস ধরে নিয়মিত আবর্জনাও পরিষ্কারও করা সম্ভব হচ্ছে না।

পুরপ্রধানের আশ্বাস, ‘‘তবে বেলডাঙা শহর থেকে একটু দূরে বাগডাঙায় বিঘে চারেক খাস জমি পাওয়া গিয়েছে। সেখানেই স্থায়ী ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করা হবে। বিষয়টি ভূমি সংস্কার দফতরকেও জানানো হয়েছে। আশা করি, খুব শিগ্‌গির এই সমস্যার সমাধান হবে।’’

কিন্তু তত দিন পর্যন্ত কি বাড়ির সামনেই জমতে থাকবে নোংরা-আবর্জনার স্তূপ? পুরপ্রধানের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘দেখছি কী করা যায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন