সব স্টেশনের ট্রেন রয়েছে, যাওয়ার টিকিট মেলে না

খবর এসেছিল, বাবার অস্ত্রোপচার করতে হবে। টাকাপয়সা নিয়ে তাই এক রকম ছুটেছিলেন সুবিমল বিশ্বাস। যেতে হবে সাঁতরাগাছি। কিন্তু বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে গিয়ে তিনি হতভম্ব। সাঁতরাগাছি যাওয়ার টিকিট নেই। টিকিট কাউন্টারে স্পষ্ট জবাব, ‘‘হাওড়া গিয়ে কেটে নেবেন।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭ ০২:৩৩
Share:

ট্রেন তো আছে, টিকিট? নিজস্ব চিত্র

খবর এসেছিল, বাবার অস্ত্রোপচার করতে হবে। টাকাপয়সা নিয়ে তাই এক রকম ছুটেছিলেন সুবিমল বিশ্বাস। যেতে হবে সাঁতরাগাছি।

Advertisement

কিন্তু বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে গিয়ে তিনি হতভম্ব। সাঁতরাগাছি যাওয়ার টিকিট নেই। টিকিট কাউন্টারে স্পষ্ট জবাব, ‘‘হাওড়া গিয়ে কেটে নেবেন।’’

হাওড়ায় নেমে ফের লাইন দিয়ে টিকিট কেটে ট্রেন ধরে যখন তিনি সাঁতরাগাছির হাসপাতালে পৌঁছলেন, তখনও টাকা আসেনি বলে ওই বেসরকারি হাসপাতাল অস্ত্রোপচার তো দূরে থাক, রোগীর কোনও চিকিৎসাই শুরু করেনি।

Advertisement

একই অবস্থা হয়েছিল নবীন ঘোষের। সালারে যাওয়ার সরাসরি টিকিট না পাওয়ায় বড় সংস্থার চাকরির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল তাঁর।

নবদ্বীপের ব্যস্ত স্টেশন বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে টিকিট কাটতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে বহু মানুষেরই। হাতে গোনা কিছু স্টেশন ছাড়া এখান থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যেরই টিকিট মেলে না। অথচ বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট নামে ‘হল্ট’ হলেও দৈনিক টিকিট বিক্রির পরিমাণ অনেক পূর্ণাঙ্গ স্টেশনকেই লজ্জা দেবে। মাসে গড়ে টিকিট বিক্রির অঙ্ক বারো লক্ষ টাকারও বেশি।

শহরের একেবারে মাঝখানে বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট। তাই কী উৎসবে, কী সাধারণ সময়ে, নবদ্বীপ ধাম ষ্টেশনের থেকে অনেক বেশি মানুষ যাতায়াত করেন এখান দিয়ে। তবুও মেলে না সব স্টেশনের টিকিট।

দেশজুড়ে সর্বত্র যখন মোবাইলে ই-টিকিটের রমরমা, তখন বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে মেলে পুরানো পেপার টিকিট। তা-ও কেবল মাত্র হাওড়া থেকে কাটোয়া এবং শিয়ালদহ ভায়া নৈহাটি রুটের স্টেশনগুলির। সঙ্গে বিক্ষিপ্ত ভাবে তারকেশ্বর এবং সিঙ্গুর স্টেশনের টিকিটই শুধু পাওয়া যায়। রিটার্ন টিকিট পাওয়া যায় কেবল মাত্র তিনটি স্টেশনের। হাওড়া, কাটোয়া এবং কালনা। মান্থলি মেলে হাওড়া, শিয়ালদহ, কাটোয়া এবং কালনার।

নিত্যযাত্রী সমিতির তরফে কাজল বসু বলেন, ‘‘কাটোয়ার পর আর কোনও স্টেশনের টিকিট পাওয়া যায় না। অথচ কাটোয়ার পরে আজিমগঞ্জ, বাজারসৌ কিংবা সালারে প্রতি দিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন।’’ বর্ধমান মেন ও কর্ড লাইন, কৃষ্ণনগর-শিয়ালদহ, হাওড়া-খড়্গপুর কিংবা শিয়ালদহ শাখার সাউথ এবং নর্থ কোনও শাখারই টিকিট মেলে না। এ নিয়ে সব চেয়ে বেশি ক্ষোভের মুখে পড়েন বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টের টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রতি দিন কয়েকশো মানুষকে ‘কেন টিকিট নেই’ এই কথা বোঝাতে গিয়ে অশান্তি পর্যন্ত হয়ে যায়।’’

‘‘সকাল থেকে রাত ট্রেন চলে, অথচ যাত্রীরা চাইলেও সব জায়গার টিকিট পাবেন না।’’—মন্তব্য নবদ্বীপ নাগরিক কমিটির ক্ষুব্ধ সম্পাদক দিলীপ চট্টোপাধ্যায়ের। নাগরিক কমিটির সম্পাদক দিলীপবাবু বলেন, “কিন্তু যাত্রী চলাচলের নিরিখে আর পাঁচটা হল্ট স্টেশনের সঙ্গে বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টের তুলনাই হয় না। উৎসবের সময়ে দৈনিক টিকিট বিক্রি লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। সেই স্টেশন কেন পূর্ণাঙ্গ স্টেশনের মর্যাদা পাবে না?” নবদ্বীপ ধাম স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার হরিদাস সরকার বলেন, “কয়েক দিন হল দায়িত্ব নিয়েছি, সবিস্তারে জেনে তার পর বলতে পারব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন