দলের অনুষ্ঠানে বস্ত্র বিলিয়ে বিতর্কে ওসি

তৃণমূলের পক্ষ নিয়ে তিনি যে প্রায়ই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধমক-চমক দেন, লালগোলা এলাকায় তা অজানা নয়। এ বার, আরও একটু বেপরোয়া হয়ে ব্লক তৃণমূলের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বস্ত্রদান করে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিলেন লালগোলা থানার অফিসার ইন চার্জ বিপ্লব কর্মকার।

Advertisement

অনল আবেদিন

লালগোলা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:১১
Share:

কাপড় বিলোচ্ছেন ওসি (নীল জামা)। নিজস্ব চিত্র

তিনি থানার বড়বাবু, তবে, শাসক দলের সঙ্গে তাঁর অহরহ ‘আশনাই’য়ের বহর দেখে বিরোধীরা প্রায়ই ফুট কাটে, ‘তৃণমূলের বড়বাবু’‍!

Advertisement

তৃণমূলের পক্ষ নিয়ে তিনি যে প্রায়ই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধমক-চমক দেন, লালগোলা এলাকায় তা অজানা নয়। এ বার, আরও একটু বেপরোয়া হয়ে ব্লক তৃণমূলের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বস্ত্রদান করে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিলেন লালগোলা থানার অফিসার ইন চার্জ বিপ্লব কর্মকার।

বিপ্লব অবশ্য এর মধ্যে কোনও বেচাল কিছু দেখছেন না। সটান জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘দুঃস্থদের মধ্যে কাপড়-জামা বিলি করে ভুল তো কিছু করিনি। কিচ্ছু বেঠিক হয়নি। যা করেছি মানবিক কারণেই করেছি।’’

Advertisement

কোনও রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এমনটা কি করা যায়? আমতা আমতা করছেন মুর্শিদাবাদ জো পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অংশুমান সাহা, ‘‘আমি জানি না ওই ওসি আইন শৃঙ্কলা সামাল দিতে ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন কিনা, না জেনে বলাটা কি ঠিক হবে!’’ জেলা পুলিশ সুপার অবশ্য ফোন ধরেননি, হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।

সীমান্ত ঘেঁষা লালগোলায় বেশ কিছু দিন ধরেই বিপ্লবের নামে বিবিধ অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। কখনও হুমকি দিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে বলা, কখনও বা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতারের হুঁশিয়ারি— একাধিকবার এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন লালগোলার সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতারা।

লালগোলা ব্লক কংগ্রেস সভাপতি অশোক রায় বলছেন, ‘‘ওঁর (বিপ্লব) সম্পর্কে আর কি বলব, কংগ্রেসের এক পঞাচ্য়েত সমিতির সদস্যকে বার বার ফোন করে হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন, ‘তৃণমূলে না গেলে মাদক আইনে গ্রেফতার করতে বাধ্য হব’, বার্ধ হয়ে সদলবলে তিনি তৃমূলে গিয়েছেন।’’ সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘আমাদের বহু কর্মীকে ওই ওসি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এলাকায় থাকতে হলে তৃণমূল করতে হবে, দলের বেশ কয়েক জন কর্মী সেই ভয়ে ফিরতেই পারেননি এলাকায়।’’ দিন কয়েক আগে স্থানীয় একটি হাই মাদ্রাসার নির্বাচনেও তৃণমূলের হয়ে তাঁর পক্ষপাতিত্ব দেখে আপত্তি জানানোয় প্রাক্তন মন্ত্রী, কংগ্রেস নেতা আবু হেনাকে হেনস্তারও অভিযোগ রয়েছে ওই পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘বাম রাজত্বে পুলিশ শাসক দলের দালালি করত। এখন তাঁরা সরাসরি তৃণমূলের ক্যাডার হয়ে গিয়েছেন। দলীয় অনুষ্ঠানে ওসি নিজে কাপড় বিলি করে তার প্রমাণ দিলেন।’’ তৃণমূলের নেতারা অবশ্য বিপ্লবের সুরেই বলছেন, ‘‘এর মধ্যে অন্যায় কোথায়!’’ লালগোলা মহকুমা তৃণমূল সভাপতি রাজীব হোসেন বলেন, ‘‘বিপ্লববাবু মানবিক কারণেই গিয়েছিলেন অনুষ্ঠানে। এতে
ভুলটা কোথায়!’’

তৃণমূলের লালগোলা ব্লক কার্যকরী সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, ‘‘আমরা কয়েকজন মিলে লাখ চারেক টাকা চাঁদা তুলে বস্ত্র বিতরণ করেছি। তবে, সবাই তৃণমূলের কর্মী বলে দলের ব্যানারে অনুষ্ঠানটি হয়েছে।’’ তবে, স্থানীয় থানার ওসি-র অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া নিয়ে দোটানা ছিল তৃণমূলেই। দলের অন্দরের খবর, ব্লক সভাপতি শুভরঞ্জন রায় ও তাঁর অনুগামীরা অনুষ্ঠান এড়িয়ে যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন