প্রতীকী ছবি।
স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের প্রধান আয়োজক চিরকালই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিশেষ করে তাদের ছাত্র-যুব সংগঠন। রক্ত আন্দোলনের কর্মীরাই জানাচ্ছেন, বাম জমানা শেষ হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে ডিওয়াইএফ-এর মতো সংগঠনের রক্তদান শিবির আয়োজনের উৎসাহ কমেছে, আর তৃণমূলের যুব সংগঠন রক্তদান শিবিরের তুলনায় উৎসব-গণবিবাহের মতো বিনোদনে আগ্রহী। দুইয়ে মিলে রক্ত সংগ্রহ ধাক্কা খাচ্ছে।
বাম আমলে ডিওয়াইএফ বছরের প্রথমেই রীতিমতো ক্যালেন্ডার তৈরি করে কোন এলাকায় কবে কত জনের রক্তদান শিবির হবে তা ঠিক করে নিত। এটা তাদের কর্মসূচির অন্যতম অঙ্গ ছিল। যেহেতু তাদের সাংগঠনিক শক্তি ভাল ছিল তাই দাতার অভাবও হত না। ২০১০ সালেও নদিয়া জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করে বলে সংগঠনের নেতাদের দাবি।
সেই ডিওয়াইএফ-ই এ বছরের গোড়ায় বামুনপুকুরে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে। তার পরের শিবিরটি আয়োজিত হয়েছে গত রবিবার, গয়েশপুরে। অর্থাৎ, মাঝখানে প্রায় আড়াই মাসের ব্যবধান। কেন এই অবস্থা? ডিওয়াইএফ-এর জেলা সভাপতি মৃণাল বিশ্বাসের দাবি, “আসলে এখন শিবিরের অনুমতি পাওয়াই কঠিন। কারণ, এ সরকার আমাদের শিবিরের অনুমতি দিতে চায় না।” তবে বামফ্রন্ট ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর তাদের ছাত্র-যুব সংগঠনের সাংগঠনিক শক্তি কমে যাওয়াটাও আরেকটি কারণ।
তৃণমূলের ছাত্র-যুবরা জেলায় রক্তদান শিবির করলেও অনেকের মতে, তার পিছনে বিরাট পরিকল্পনা বা সাংগঠনিক ক্ষমতা থাকে না। ফলে, রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ কমে যায়। যদিও নদিয়া জেলার যুব তৃণমূল সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাসের দাবি, তাঁরা বছরে ৩০-৩৫টি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন। আগামী ৩১ মার্চ জেলার নানা প্রান্তের নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন সত্যজিৎ। তিনি বলেন, “গরমের সময়ই রক্তের আকাল বেশি হয়। তখন রক্তদান শিবির কী ভাবে বাড়ানো যায় স্থির করতেই বৈঠক ডাকা হয়েছে।” মুর্শিদাবাদ জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডেপুটি সুপার প্রভাসচন্দ্র মৃধা জানান, রক্তের আকাল মেটাতে যাঁরা রক্ত নিতে আসছেন তাঁদের ‘ডোনার’ সঙ্গে করে আনতে বলা হচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া, প্রসূতি, দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম রোগীদের ক্ষেত্রে তা করা হচ্ছে না। রক্তের অপচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক বেসরকারি হাসপাতাল যত ইউনিট রক্ত প্রয়োজন বলে লিখে দেয় পরে ততটা লাগে না। রক্ত নষ্ট হয়।’’
রাজ্য যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সৌমিক হোসেন বলেন, ‘‘ভোটের দিন ঘোষণা হলে শিবির করা যায় না। এটা নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’