পরিষেবা না পেয়ে ফিরছেন রোগীরা

ছোট্ট দেবিকার মাথা থেকে অবিরাম রক্ত ঝরছে। হাউমাউ করে কাঁদছেন আত্মীয়েরা। এ দিক-সে দিক ছুটছেন মা। হাসপাতালে এসে গোটা পরিবার বুঝে উঠতে পারছে না, কী করবে। চারিদিকে ঘুরেও চিকিৎসককে দেখা যাচ্ছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৭ ০২:১২
Share:

ছোট্ট দেবিকার মাথা থেকে অবিরাম রক্ত ঝরছে। হাউমাউ করে কাঁদছেন আত্মীয়েরা। এ দিক-সে দিক ছুটছেন মা। হাসপাতালে এসে গোটা পরিবার বুঝে উঠতে পারছে না, কী করবে। চারিদিকে ঘুরেও চিকিৎসককে দেখা যাচ্ছে না। শেষে অনুনয়-বিনয়ে সাড়া দিয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা। তাঁদের শুরু করলেন সেলাই। শেষে তাঁরাই লিখে দিলেন ওষুধের তালিকা।

Advertisement

এ ভাবেই চলছে জলঙ্গির সাগরপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। দিন দুয়েক এখান দু’জন চিকিৎসকেই পাঠানো হয়েছে ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে তাঁরা এসএনসিইউ-এ চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাঁরা আর সাগরপাড়ায় ফিরবেন না। ফলে চলতি সপ্তাহের প্রথম থেকেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সাগরপাড়ার লোকজনের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার বিষয়টি। লোকজন এসে বেজার মুখে ফিরে যাচ্ছেন। আর ছোটখাটো অসুখে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরাই কোনওরকমে ওষুধ দিচ্ছেন। আর বলছেন, ‘‘ডোমকল হাসপাতালে নিয়ে যান। ওখানে রয়েছেন ডাক্তারবাবু।’’

ডোমকলের এসিএমওএইচ শুভরঞ্জন চন্দ বলেন, ‘‘আপাতত রোগীদের সাদিখাঁরদেয়াড় গ্রামীণ হাসপাতালে যেতে বলা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত ওই হাসপাতালে পূর্ণ সময়ের চিকিৎসক দেওয়া সম্ভব হবে।’’ স্বাস্থ্য দফতর যাই বলুক, চিকিৎসক না থাকার জ্বালা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন লোকজন। সাগরপাড়া খেকে সাদিখাঁরদেয়াড়ের দূরত্ব পাক্কা ২০ কিলোমিটার। গ্রামের লোকজনকে অতটা পথ উজিয়ে রোগী নিয়ে যেতে হচ্ছে সেখানে।

Advertisement

অথচ ক’দিন আগেও বাড়ির কাছেই মিলত চিকিৎসা পরিষেবা। প্রতিদিন সেখানে প্রায় ৩০০ জন রোগী বর্হিবিভাগে ভিড় করতেন। রয়েছে গোটা কুড়ি শয্যা। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সে সব যেন অতীত হয়ে গিয়েছে। বামনাবাদের আদরা বিবি বয়সের ভারে সে ভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না। কোনও রকমে তিনি এসেছিলেন সাগরপাড়ায় ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু চিকিৎসকের দেখা পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘এখন ২০ কিলোমিটার দূরে সেই সাদিখাঁরদেয়াড়ে যাওয়া কি সম্ভব!’’

চক চৈতন্যের কার্তিক মণ্ডলের দাবি, ‘‘অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে বড় বিপাকে পড়েছি। প্রথম থেকে এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেখিয়ে আসছি। এখন শুনছি ওঁরা নেই। কী করব সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।’’ দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, মূখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রকল্প এসএনসিইউ। ডোমকল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু হবে চলতি মাসেই। ফলে ওই বড় কর্তাদের নির্দেশ পালন করতে হচ্ছে আমাদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন