শীতে কম্বল মিলছে না হাসপাতালে

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ, সব সময়ে ওয়ার্ডের দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হবে। পাল্লা ভাঙা থাকলে প্লাস্টিক সাঁটিয়ে বন্ধ করতে হবে। সমস্ত রোগীকে চাদর-কম্বল দিতেই হবে। তার পরেও এই অবস্থা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কান্দি ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:১৭
Share:

রোগীদেরই আনতে হয়েছে বিছানার চাদর, কম্বল। বড়ঞায়। নিজস্ব চিত্র

হাড় হিম করা ঠান্ডা পড়েছে। এ দিকে হাসপাতালের জানলায় পাল্লা নেই। হু-হু করে ঢুকছে হিম বাতাস। কিন্তু রোগীদের চাদর-কম্বল দেওয়ার বালাই নেই! একটা-দু’টো জায়গায় নয়, বহু জায়গাতেই এই চিত্র। কান্দি মহকুমার পাঁচটি ব্লকের গ্রামীণ হাসপাতাল এবং কান্দি মহকুমা হাসপাতালও রয়েছে এই তালিকায়। রয়েছে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, এমনকী কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল (জেএনএম) মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালও।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ, সব সময়ে ওয়ার্ডের দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হবে। পাল্লা ভাঙা থাকলে প্লাস্টিক সাঁটিয়ে বন্ধ করতে হবে। সমস্ত রোগীকে চাদর-কম্বল দিতেই হবে। তার পরেও এই অবস্থা।

বড়ঞা গ্রামীণ হাসপাতালে ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় তিন লক্ষ বাসিন্দা আসেন। ওই ব্লক ছাড়াও লাগোয়া বীরভূম জেলা ও বর্ধমান জেলার বাসিন্দারাও ওই হাসপাতালে ভিড় করেন। কেন দেওয়া হচ্ছে না চাদর বা কম্বল? হাসপাতালের দাবি, রোগীদের সে সব দেওয়া হলে তাঁরা ব্যাগে ভরে বাড়ি নিয়ে চলে যান। নজরদারি সম্ভব হয় না।

Advertisement

পাঁচথুপির শাহানুর শেখ বলেন, “পেটে ব্যথা নিয়ে এসেছি। নার্স বলেছে, কম্বল-টম্বল নেই, বাড়ি থেকে আনতে হবে।” মহিলা ওয়ার্ডে জানালার পাশেই শয্যা ববরপুরের বৃদ্ধা জেবের বেওয়ার। তিনি বলেন, “জানলায় পাল্লা নেই। বাড়ি থেকে একটা ত্রিপল নিয়ে এসে জানলায় লাগিয়ে কোনও মতে আছি।” তবে‌ বড়ঞা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দীনেশ গায়েনের দাবি, “হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাদর-কম্বল নেই। যা আছে, তাতে সব রোগীকে দেওয়া যাবে না। কান্দি থেকে কম্বল এনে রোগীদের দেওয়ার চেষ্টা করছি।” মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস পাল্টা বলেন, “চাদর-কম্বলের অভাব নেই। প্রত্যেক রোগীকে তা দিতেই হবে।’’ তার পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘কিন্তু রোগীরা সে সব নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। সেটা সমস্যার।’’

বুকে ব্যথা নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ধুবুলিয়ার কালীনগরের বাসিন্দা, বছর পঞ্চাশের মনসুর আলি। প্রথম দিন শয্যা মিললেও মেলেনি কম্বল। অগত্যা বাড়ি থেকে আনা বিছানার চাদর জড়িয়েই কোনও মতে কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে পরের দিন তাঁকে কম্বল দেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্মীদের দাবি, কোনও দিন শয্যাসংখ্যার থেকে রোগী বেশি হয়ে গেলেই এমনটা হচ্ছে। সকলকে কম্বল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যদিও হাসপাতালের সুপার সুবিকাশ বিশ্বাস বসেন, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। কথা বলব ওয়ার্ড মাস্টারের সঙ্গে।”

নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ের দাবি, “হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত সংখ্যায় কম্বল রয়েছে। অভাব হওয়ার তো কথা নয়।” নিরুপমবাবু বলেন, ‘‘যে সব জায়গায় চাদর-কম্বল দেওয়া হচ্ছে না, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলছি। যাই ঘটুক না কেন, শীতের সময়ে এটা মেনে নেওয়া যাবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন