চিয়ারলিডারে মাত অরঙ্গাবাদ

হেমন্তের হালকা কুয়াশা ছিঁড়ে আলোয় মাখামাখি সন্ধ্যার আকাশ। শীত পড়তেই চারদিকে যখন ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি, নদিয়ার নবদ্বীপ আর মুর্শিদাবাদ অরঙ্গাবাদ মাতোয়ারা ফুটবলে।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিমান হাজরা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:০০
Share:

এন্তার মজা। দেদার লোক। বিস্তর ফুর্তি। হেমন্তের হালকা কুয়াশা ছিঁড়ে আলোয় মাখামাখি সন্ধ্যার আকাশ। শীত পড়তেই চারদিকে যখন ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি, নদিয়ার নবদ্বীপ আর মুর্শিদাবাদ অরঙ্গাবাদ মাতোয়ারা ফুটবলে।

Advertisement

রবিবার থেকে নবদ্বীপে শুরু হল সকার কাপ। আর এ দিনই অরঙ্গাবাদে টাউন ক্লাব আয়োজিত ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল হয়ে গেল। খেলার মাঠে এমন মণিকাঞ্চন যোগ নবদ্বীপ আগে কখনও দেখেছে বলে মনে হয় না। এ বার চার বছরে পা দিল সকার কাপ। আর তার উদ্বোধন হল নবদ্বীপের নিজস্ব নতুন স্টেডিয়ামে। এমন মারকাটারি যুগলবন্দির পরে রবিবারের সন্ধ্যা জমতে আর বেশি কী লাগে!

রবিবার দুপুরের পর থেকেই নবদ্বীপের সব রাস্তা গিয়ে মিশেছিল প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি নবদ্বীপ রেল ষ্টেশন সংলগ্ন মাঠে গড়ে ওঠা বিবেকানন্দ স্টেডিয়ামে। সকার কাপের আকর্ষণ ধরে রাখতে আয়োজকরাও কোন খামতি রাখতে চাননি। সবুজ কার্পেটের মতো মাঠের পঞ্চাশ-ষাট ফুট উঁচু দিয়ে ড্রোন ক্যামেরা উড়িয়ে, সাতটা ক্যামেরা দিয়ে ম্যাচসহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচার করে ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্বোধন মফ‌স্সলের মাঠে সচারাচর হয়না। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, বিকাশ পাঁজির মতো তারকা খেলোয়ারদের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে অংশগ্রহণকারী ২৮টি ক্লাব এবং বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের বর্ণাঢ্য পদযাত্রা দিয়ে রবিবারের বিকেলটা শুরু হয়ে ছিল।

Advertisement

গিনেস বুকে নাম তোলা জাগলার মনোজ মিশ্রের জাগলিং, নাচ-গান জিমন্যাস্টিক, ব্যালে, লেসার আলোর চমকের পর চমকে ঘড়ির কাঁটা সাতটার ঘরে পৌঁছাতেই ফুটবলে পা ছুঁইয়ে সকার কাপের শুভসূচনা করলেন মনোরঞ্জন ভত্তাচার্য, বিকাশ পাঁজিরা। সঙ্গে সঙ্গে হেমন্তের রাত আলোকিত হল আতসবাজির রোশনাইয়ে। উদ্বোধনী ম্যাচে প্রতাপনগর তরুণ সঙ্ঘ নবমিলন সঙ্ঘকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয়।

প্রায় বত্রিশ বিঘা জমির উপর গড়া হয়েছে বিবেকানন্দ স্টেডিয়াম। নবদ্বীপের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা এবং পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহার দীর্ঘদিনের চেষ্টার ফসল এই স্টেডিয়াম। নবদ্বীপ বন্যাপ্রবণ বলে বিশেষ নিকাশি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখনও গ্যালারির কাজ চলছে। নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমান বলেন, ‘‘নবদ্বীপের ফুটবলের সুনাম ফিরিয়ে আনতে এবং এলাকা থেকে ফুটবলার তুলে আনতে এমন টুর্নামেন্টের আয়োজন।’’ অরঙ্গাবাদের টাউন ক্লাবের টুর্নামেন্ট এ বার তিন বছর পার করল। আয়োজক মন্ত্রী জাকির হোসেন। জনসংযোগ বাড়াতেই এমন আয়োজন। তবে বিনোদনের কোনও খামতি ছিল না। গত দু’বছর দিনের আলোয় খেলা হলেও এ বার ফুটবল হল রাতে, ফ্লাড লাইটে। গত বছর চিয়ার লিডারদের নিয়ে আসা হয়েছিল নদিয়া থেকে। এ বারে খোদ কলকাতা থেকে।

চমক ছিল যোগ দেওয়া ফুটবল দলেও। আটটি দলের সাতটিই বাইরের। কলকাতার রেনবো, পাঠচক্র, অনূর্ধ্ব উনিশ মহামেডান স্পোর্টিং, ভুটানের মিলন সঙ্ঘ, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও তমলুকের ইন্ডিয়ান স্টার যোগ দিচ্ছে তাতে। বাংলাদেশের ঢাকা থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল পল্লবী কল্যাণ সমিতিকেও।

গত দু’বছরের উন্মাদনার জন্য এ বার ৩০ ও ৫০ টাকার টিকিট রাখা হয়েছিল। তার পরেও মাঠে তিল মাত্র জায়গা ছিল রবিবার ফাইনালে পাঠচক্র ৫-১ গোলে অরঙ্গাবাদ টাউন ক্লাবকে হারিয়ে ট্রফি জিতে নেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন