কড়াই চড়ে গ্রাম ছাড়ছে ত্রস্ত ভড়ঞা

কুঁয়ে নদীর বাড়বাড়ন্ত বড়ঞা ব্লকের জাওহাড়ি, ভড়ঞা, সোনা ভারুই গ্রামের যোগাযোগের রাস্তা ভাসিয়ে দিয়েছে। তিন গ্রামের মানুষ জলবন্দি। জেলা প্রশাসনের লোক সে গ্রামে ত্রাণ নিয়ে ঢুকতে পারছেন না।

Advertisement

কৌশিক সাহা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৭ ০২:১২
Share:

জল-ভেঙে: পারানির কড়ি দশ টাকা ফেললে গুড়ের কড়াই নিয়ে হাজির মাঝি। সোমবার জাওহাড়ি বড়ঞায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

আকাশে বধির মেঘ, নীচে ঘোলা জলে হাবুডুবু গাঁ-গঞ্জ। শ্রাবণের নাগাড়ে বৃষ্টি বন্যার ভ্রূকুটি এঁকে দিল মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে।

Advertisement

কোথাও ছাদ-হীন পরিবারের উঁচু ডাঙার খোঁজ, কোথাও বা ত্রাণের হাহাকার। স্পিড বোট খুঁজে ফিরছে জলবন্দি মানুষজনদের। মুর্শিদাবাদের কান্দি থেকে নবদ্বীপের চোরা গলি— এখন নিত্য সকালে জল মাপছে।

এই অবস্থায় সরকারি ভাবে বানভাসি পরিস্থিতি ঘোষণা করা না হলেও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কোথাও পৌঁছিয়েছে ত্রাণ কোথাও বা মানুষ তার সাধের গবাদি পশুদের নিয়ে এখনও জলবন্দি।

Advertisement

কান্দির কুঁয়ে নদীর জল না কমায় গত তিন দিন ধরে জলবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে বড়ঞা ব্লকের সুন্দরপুর পঞ্চায়েত। সেখানে বিভিন্ন গ্রামে প্রায় দেড়শো পরিবার হা-পিত্যেশ করছে ত্রাণের। তবে, বৃষ্টি একটু ধরায় ব্রাহ্মণীর জলস্তর কমায় খড়গ্রাম ব্লকে যাদবপুর, নিচুযাদবপুর, ভুসকুল, কেলায়, পোড়াডাঙা এলাকার মানুষ তিন দিন পরে ফিরছেন নিজের কাদা স্যাঁতস্যাঁতে ভিটেয়। নিচু যাদবপুর এলাকায় ব্রাহ্মণীর ৪৫ মিটার বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। অচিরে তা মেরামত করা দরকার। কিন্তু এ অবস্থায় তা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে কপালে বাঁজ পড়েছে সেচ দফতরের।

কুঁয়ে নদীর বাড়বাড়ন্ত বড়ঞা ব্লকের জাওহাড়ি, ভড়ঞা, সোনা ভারুই গ্রামের যোগাযোগের রাস্তা ভাসিয়ে দিয়েছে। তিন গ্রামের মানুষ জলবন্দি। জেলা প্রশাসনের লোক সে গ্রামে ত্রাণ নিয়ে ঢুকতে পারছেন না।

ভড়ঞা গ্রামের সেন্টু বাগদি নিজের উদ্যোগে গুড়ের কড়াই জলে ভাসিয়ে দশ টাকায় পারাপার করছেন মানুষজন। সেন্টু বলেন, “সারা দিন জলে জলে গ্রামের মানুষকে পারাপার করব তাই দশটা করে টাকা নিচ্ছি।’’

বিস্তীর্ণ এলাকায় আবাদি জমি ভেসে যাওয়ায় নষ্ট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার আমন ধান আর অর্থকরী ফসল। ভড়ঞা গ্রামের পরমান্দ ঘোষ বলেন, “তিন দিন ধরে গ্রামের যোগাযোগের রাস্তায় জল জমে আছে। সেই দিকে প্রশাসনের কর্তাদের নজর নেই। আমরা ত্রাণ চাই না, কিন্তু যোগাযোগ চাই।’’ সেচ দফতর সূত্রে খবর ব্রাহ্মণী নদীর জল কমে যাওয়ায় নতুন করে খড়গ্রাম ব্লকে বন্যা হয়নি। কুঁয়ে নদীর জলে বড়ঞা ব্লকের সুন্দরপুর এলাকায় জলমগ্ন হয়েছে নতুন করে। কান্দি মহকুমা সেচ আধিকারিক দীপক রক্ষিত বলেন, “খড়গ্রামে ব্রাক্ষণীর বাঁধ মেরামতির কাজ দ্রুত শুরু হবে। চিন্তা এখন কুঁয়ে নদীর জল নিয়ে। ময়ূরাক্ষী নদীতে জল না থাকলেও বীরভূম থেকে লাঙলহাটা বিল দিয়ে জল ধেয়ে আসছে।’’

পাশের জেলা নদিয়ায় পরিস্থিতি তেমন ভয়াল নয়, তবে সেখানেও আকাশে মেঘ আর নদীর জলস্তর বাড়ছে বলে সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। ভাগীরথী ও জলঙ্গির জলস্তর সোমবার সকালে ৭.২২ মিটার। যেখানে দুই নদীর বিপদসীমা ৮.৪৪ মিটার। চুর্ণী ও মাথাভাঙা নদীর জলস্তর এ দিন যথাক্রমে ৫.৯৯ মিটার ও ৬ মিটার। এই দুই নদীরই বিপদসীমা ৭.৮২ মিটার ও ৮.১৪ মিটার। তবে, নপাড়া-মুসুন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মঙ্গল ঘোষ বলেন, “কৃষি প্রধান এলাকা। চারশো একরের বেশি জমির আমন ধান ও সবজি জলের তলায়। বৃষ্টি সব শেষ করে দিল।’’

সোমবার নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জে গঙ্গার জলস্তরের উচ্চতা ছিল ৭.২২ মিটার। এখানে বিপদসীমা ৮.৪৪ মিটার। নদিয়া জেলা সেচ দপ্তরের এসডিও সুবীর রায় জানিয়েছেন সোমবার দুপুর পর্যন্ত নদীর জলস্তর বৃদ্ধির হার প্রতি ঘণ্টায় .০২ সেমি। তবে বৃষ্টি বাড়লে জল বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন