হারানো গ্রাম এখনও জেগে ওঠে মেলায়

চরের নয়া ঠিকানায় সেই গত সত্তর বছর ধরে সেই শালের কাঠামোতেই চলছে পুজো। নিয়ম মেনে বলিদান আর বাতাসার ভোগ।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

চর দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫৮
Share:

চরের কালী। নিজস্ব চিত্র

ভিটে, পুকুর, চেনা গোয়াল, ছড়ানো গাঁ গঞ্জে পরিজন— রাতের আঁধারে ছিন্ন দেশ ছেড়ে অচেনা পরিসরে পা বাড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। তোষকের নিচে জমানো টাকা, কলুঙ্গিতে রাখা বাড়ির ঠাকুর আর পরনের পোশাক, বাকিটা ছেড়ে আসা সেই পুরনো দূর্গাপুরে। বুকের মাঝে রাখা সেই হারানো গ্রামের স্মৃতি ছাড়া কাঁধে কাঁধে চরে এসে উঠেছিল আর একটা শাল কাঠের থান।

Advertisement

চরের নয়া ঠিকানায় সেই গত সত্তর বছর ধরে সেই শালের কাঠামোতেই চলছে পুজো। নিয়ম মেনে বলিদান আর বাতাসার ভোগ।

সেই পুজো ঘিরেই এখন হাজারো মানুষের ভিড়। নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, বীরভূমের ঘর ছাড়াদের ভিড়, সীমান্তের মেলা। সীমান্ত প্রহরার কড়া নজরের আড়ালে পা রাখছেন ও পারের মানুষজনও। যে মেলা জেগে আকছে মধ্য রাতের শীতের হাওয়া বুকে নিয়েও।

Advertisement

ও পারে বাংলাদেশের রাজশাহী শহর। নব্য চরে জেগে ওঠা জনবসত চর দুর্গাপুর। দেশ ভাগ হয়ে গেলেও চরের ছোঁয়াটুকু রেখে দুর্গাপুর নামটা আর ফেলতে পারেনননি বসতের মানুষজন।

নারায়ণ মণ্ডল সে চরের পুরনো বাসিন্দা। বলছেন, ‘‘বাবা কাকার হাত ধরে সেই এসে উঠেছিলাম চরে। সেই রাতেটা এখনও ফিকে হয়নি। তারপর একটু একটু করে বড় হয়েছি এই চরের গেরাটোপে।’’ রাস্তা আলো স্কুল কিছুই ছিল না গ্রামে। বন্যা হলেই ডুবে যেত চরাচর। কিন্তু পুজো আর মেলা বন্ধ হয়নি। এখন রাস্তা-আলো হয়ছে। গ্রামের ছোট্ট মন্দিরটি বড় হয়েছে। পরিসর বেড়েছে মেলার। এখন জেলা ছাড়াও ভিন জেলার অনেকে আসেন এই মেলায়।

বুধবার রাতে শুরু হয়েছে সেই মেলা। শয়ে শয়ে পাঠা বলি হচ্ছে। ভোগের বাতাসার পাহাড় জমে উঠেছে। চরের গ্রামের অলি গলি ছেয়ে গিয়েছে মনিহারি দোকানে। সঙ্গে জিলিপি, তেলেভাজা, বাদাম চাকের সার দেওয়া দোকান। আর দুপুর থেকে জমে উঠছে ভিড়।

নদিয়ার পলাশিপাড়া থেকে মেলায় এসেছেন মিঠুন মণ্ডল। বলছেন, ‘‘এই মেলার কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু দেখা হয়নি। এ বার দেখলাম, মন ভরে গেল।’’

মেলা কমিটির সম্পাদক দ্বিজেন মণ্ডল বলছেন, ‘‘অনেক কিছু নেই, কিন্তু আমাদের এই মেলা আছে। সারা বছর গোটা এলাকার মানুষ তাকিয়ে থাকে এই মেলার দিকে। এলাকা ছাড়াও অনেক দুর দুরান্তের মানুষ এখানে আসেন এই সময়ে। চার দিনের মেলার জন্য সম্বৎসর অপেক্ষা।’’ তবে খুশির মাঝেও একটা চাপা কষ্ট আছে। সীমান্তের কড়াকড়িতে বাংলাদেশের আত্মীযেরা সহজে আসতে পারেন না। আগে, অবশ্য এত কড়াকড়ি ছিল না। ছাড় মিলত বিএসএফের কাছে। এখন সে সুযোগ কমে গেছে।

রানিনগর থানার ওসি অরুপ রায়ও ঘুরছেন মেলায়। বললেন, ‘‘রানিনগরে পোষ্টিং না হলে জীবনের বড় একটা অভিজ্ঞতার খামতি থেকে যেত। এত প্রত্যান্ত সীমান্তে এমন সম্প্রীতি দেখতে পেতাম না।’’

না-পাওয়া চরের মানুষের কাছে এটাই বুঝি পাওনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন