হাহাকার: অকেজো তিনটি নলকূপ। অন্য এক নলকূপে জল পড়ে সরু ফিতের মতো। সেটুকুই পেতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সারা গাঁ। সাগরদিঘির ভূমিহর গ্রামে। ছবি: বিমান হাজরা
ভরা বৈশাখে ফুটিফাটা জমি। চাঁদি ফাটা রোদ্দুরে গলা শুকিয়ে কাঠ। অথচ গ্রামের চারটে নলকূপের মধ্যে তিনটেই অকেজো। একখানা কোনও মতে সচল থাকলেও, তাতে জল পড়ে প্রায় সুতোর মতো।
ফলে ভরা গ্রীষ্মে গত এক মাস ধরে তীব্র পানীয় জলের কষ্টে পড়েছেন সাগরদিঘি ব্লকের মনিগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম ছোট ভূমিহরের বাসিন্দারা। আপাতত তাঁদের পানীয় জলের ভরসা বলতে তাই গ্রামের মাঠে সেচের জন্য বসানো কয়েকটি গভীর নলকূপ।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বারবার এই দুঃসহ পরিস্থিতির কথা মনিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতকে জানানো সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি। অকেজো নলকূপের একটিও সারানো হয়নি। এমনকী গত ছ’মাস অচল হয়ে পড়ে রয়েছে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের নলকূপটিও। ফলে জলকষ্টে স্কুল পড়ুয়ারাও। মিড ডে মিলে রান্নার জন্য স্কুলেরও ভরসা মাঠে বসানো সেচের পাম্প কল।
গ্রামের মহিলা প্রসাদী মণ্ডল বলেন, “পুকুর ও ডোবার জলে স্নান, বাসন মাজা, শৌচকার্য না হয় কোনও মতে সারা হল। কিন্তু রান্নাবান্না। অনেক বাড়িতে সেটাও ওই জলেই করতে হচ্ছে। কিন্তু সে জল তো আর খাওয়া যায় না!’’ জানালেন, এক মাস ধরে পানীয় জলের সঙ্কট চলছে গ্রাম জুড়ে। তাই মাঠে সেচের পাম্প চালু হলেই সেখান থেকে জল আনতে ছুটতে হয় মেয়েদের।
ষাটোর্ধ্ব মদন মণ্ডল বলছেন, “গ্রামের পুকুরগুলোতেও সে ভাবে জল নেই। ক’দিনের বৃষ্টিতে কিছুটা তা-ও জল জমেছে। দু’একটা বাড়িতে নলকূপ থাকলেও জল মিলছে না সেখানে। গ্রামের যে নলকূপটাতে জল উঠছে, সেখানেও সকাল থেকেই লম্বা লাইন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর পরিবার পিছু এক কলসি জল মিলছে।”
স্কুল শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের কথায়, “ছ’মাস হল স্কুলের নলকূপ খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। দু’এক বার স্কুল নিজের পয়সায় সারিয়ে নিলেও, নতুন করে নলকূপ বসানোর মতো পয়সা স্কুলের নেই। তাই পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছে। জল না থাকায় স্কুলের বাচ্চারা খুব সঙ্কটে পড়েছে। দূর থেকে জল এনে মিড ডে মিলের রান্না করতে হচ্ছে।”
গ্রামের আর এক বাসিন্দা গৌতম মণ্ডল বলছেন, “গ্রামে প্রায় ২০০০ মানুষের বাস। সবাই সাধারণ দিনমজুর ও নিম্নবিত্ত চাষি। কিনে জল খাওয়ার সামর্থ্য নেই কারোরই।”
ছোট ভূমিহর গ্রামে পানীয় জল সঙ্কটের কথা মেনে নিয়ে মনিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দেবাশিস সরকারের বক্তব্য, সাধারণ অবস্থায় নলকূপগুলোতে ৮০ ফুট নীচেই জলস্তর মেলে। ফলে সমস্যা হয় না। কিন্তু এলাকায় এত বেশি গভীর নলকূপ বসেছে যে এখন সেই জলস্তর ১৪০ ফুট নীচে নেমে গিয়েছে। তাই নলকূপও কাজ করছে না।