বহরমপুরের একটি দোকানে। নিজস্ব চিত্র
বছর কয়েক আগেও ধনতেরাসের ভিড়টা ছিল অবাঙালি জনতার। ছবিটা বদলে গিয়েছে চলতি সংস্কৃতির সঙ্গে। হিন্দি বলয়ের পুজো, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এখন সাবেক বাংলার রীতি-নীতির উঠোনে দিব্যি জায়গা করে নিয়েছে। রামনবমী থেকে গণেশ পুজো, হনুমানের পুজো-আচ্চা থেকে ধনতেরাস—গো-বলয়ের সব সংস্কৃতিই এখন এ বাংলার সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানাচ্ছেন সোনা থেকে পোশাক-আশাকের কারবারিরা। কারণ, নব্য এই সংস্কৃতির আঁচটা তাঁরাই সরাসরি পেয়ে থাকেন।
ধনতেরাসের সেই তালিকায় বাদ পড়েনি নবাব ভূমির বহরমপুরও।
শুক্রবার বহরমপুরের লালদিঘি থেকে খাগড়া, নতুনবাজার থেকে সোনাপট্টি এলাকার বিভিন্ন সোনার দোকানে উপচে পড়া ভিড় ছিল। পাড়ার দোকান থেকে নামী দোকানের শো-রুমেও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতাদের ধনতেরাস উপলক্ষে বিভিন্ন নামী-দামি ব্র্যান্ডের গয়না কিনতে জুয়েলারি শোরুমগুলিতেও শুধু নয়, এই সময়ে সোনার গয়না কেনা প্রবণতা খাগড়া সোনাপট্টির বিভিন্ন দোকানগুলিতেও বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা দিচ্ছে। শুধু বাঙালি হিন্দু পরিবারের মানুষজন একা নন, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলার প্রচুর মানুষ এই সময় সোনার অলঙ্কার কিনে থাকেন। খাগড়ার একটি নামী জুয়েলারি শোরুমে ডোমকলের হাসানুজ্জামান তাঁর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে সঙ্গে নিয়ে নেকলেস ও গয়না কিনতে এসেছিলেন। হাসানুজ্জামান বলেন, ‘কাগজে দেখলাম, এই সময় প্রচুর ছাড় দিচ্ছে, তাই গয়না কিনতে চলে এলাম’। লালবাগের আয়েশা সুলতানার সামনেই মেয়ের বিয়ে,তাই স্বামী, মেয়েকে নিয়ে শহরের এক নামী শোরুমে গয়না কিনতে এসেছিলেন। খাগড়ার এক পুরনো সোনার দোকানের মালিক অমলেশ ধর জানান,বেশ কয়েক বছর ধরে ধনতেরাসের সময় সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে গয়না কেনার প্রবণতা বেড়েছে। আসলে বহরমপুরে এখন প্রায় সব নামী দামি ব্র্যান্ডের জুয়েলারি শোরুম চালু হয়েছে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে তাদেরও বিভিন্ন ছাড় দিতে হচ্ছে। তবে এই সময় বিক্রী বেড়েছে। শোরুমের স্টোর ম্যানেজার রুপেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান তাঁদের শোরুম রোজ খোলা। তিনি বলেন,তাঁদের শোরুমের সোনা বা হিরের গয়না প্রচুর দামি বলে মনে করছেন,কিন্তু এটা ভুল ধারণা, সব ধরনের ক্রেতার আর্থিক অবস্থা ভেবে অল্প দামেও গয়না পাওয়া যাচ্ছে। নানা ধরনের প্যাকেজ ও ছাড় দেওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে বেশ চাহিদা দেখা দিয়েছে। অনেকেই সামনেই মেয়ের বিয়ের জন্য ধনতেরাসের ছাড়ের সুযোগ নিয়ে গয়না কিনে রাখছেন। খাগড়ার এক রুপোর অলঙ্কার ও বাসন ব্যবসায়ী গোপাল মুখোপাধ্যায় জানালেন, ধনতেরাসে শুধু যে সোনার গয়না কিনতে হবে তার কোন মানে নেই। যে কোন একটি শুদ্ধ ধাতুর সামগ্রী কিনলেই হল। তাদের দোকানে এ বার রুপোর লক্ষ্মী, গনেশ, রুপোর বাসনসেট এর বেশ চাহিদা আছে।