প্রেক্ষাগৃহের অভাবে সাংস্কৃতিক দিক থেকে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে চাপড়া। বছরে একবার চাপড়া বইমেলা হয়। আর সেই মঞ্চেই নাচ, গান, নাটক মঞ্চস্থ করার সুযোগ পান স্থানীয় শিল্পীরা। এর বাইরে কেউ যদি কোনও অনুষ্ঠান করতে চান তাহলে মোটা টাকা খরচ করে কোনও ফাঁকা মাঠে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে নিতে হয়। কিন্তু সকলের পক্ষে সেই মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয় না। বাকি থাকে কেবল পঞ্চায়েত সমিতির প্রেক্ষাগৃহ। কিন্তু সেটাও উন্নত মানের নয়। ফলে নদিয়ার এই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনপদে ভাল কোন অনুষ্ঠান করা তো দূরের কথা, স্থানীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বাৎসরিক অনুষ্ঠান পর্যন্ত করতে পারে না। আর এই কারণে এলাকার সংস্কৃতিপ্রেমী লোকজন রীতিমতো ক্ষুব্ধও। তাঁদের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি সকলের কাছে দরবার করেও কোনও লাভ হয়নি।
প্রায় ৩৫ বছর ধরে গানের স্কুল চালাচ্ছেন নির্মলেন্দু বিশ্বাস। ফি বছর তিনি সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজনও করেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘চাপড়ায় একটা ভাল প্রেক্ষাগৃহ না থাকার কারণে আমাদের অনুষ্ঠান করতে সত্যিই খুব সমস্যা হয়।’’ একই কথা বলেন স্থানীয় একটি নাচের স্কুলের কর্ণধার কৃষ্ণা দত্ত। তিনি বলেন,‘‘অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে অনুষ্ঠান করতে গেলে বিস্তর টাকা খরচ হয়। ফলে প্রতি বছর আমাদের পক্ষে অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয় না। স্থায়ী প্রেক্ষাগৃহ থাকলে চাপড়ার সাংস্কৃতিক চিত্রটা অন্য রকম হতে পারত।’’
সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এক সময় চাপড়া যথেষ্ট সমৃদ্ধ ছিল। জেলার বাইরেও চাপড়ার যাত্রা ও লোকসঙ্গীতের বেশ কদর ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে সবে ভাঁটা পড়েছে। পরবর্তীতে নাটকও সে ভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি। একটা মাত্র নাট্যগোষ্ঠী কোনও রকমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছে। তবে আর কতদিন সেটা টিকে থাকবে তা নিয়ে সন্দিহান ওই নাট্যগোষ্ঠীর কর্তারাও। ওই নাট্যগোষ্ঠীর অন্যতম কর্ণধার তাপস অধিকারী বলেন, ‘‘আমরা সত্যিই হতাশ। বছরে একবার বইমেলায় নাটক করার সুযোগ পাই। ওইটুকুই!’’ তিনি বলেন, ‘‘একটা প্রেক্ষাগৃহের অভাবে বাইরের নাটকের দল নিয়ে এসে নাট্যোৎসবও করতে পারি না। আর এইসব কারণে চাপড়ায় এখনও পর্যন্ত নাটকের দর্শকই তৈরি হল না। ভাবতেই কষ্ট হয় জেলা সদরের এত কাছে থেকেও আমরা কত পিছিয়ে পড়ছি।’’
তবে এত হতাশার ভিতরেও আশ্বাস দিচ্ছেন চাপড়ার বিধায়ক তৃণমূলের রুকবানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘জায়গার অভাবে এতদিন আমরা একটা প্রেক্ষাগৃহ করে উঠতে পারছিলাম না। বাঙালঝির কাছে একটা জায়গা পেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি। আশা করছি আমরা কয়েক মাসের মধ্যেই সেখানে একটা উন্নত মানের প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করতে পারব।’’