কাগ্রামের শারদোৎসব জগদ্ধাত্রী পুজো। গ্রামের ২৩টি পুজোর মধ্যে ১১টি পারিবারিক পুজো এবং ১২টি পুজো সর্বজনীন। সর্বজনীন বিভিন্ন পুজো কমিটি’র বাজেট কয়েক লক্ষ টাকার উপরে। গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশই কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল এবং গ্রামের অনেকেই রুজির টানে ভিনরাজ্যে থাকেন। তাই বাসিন্দাদের কাছে চাঁদার জুলুম তেমন করতে পারে না পুজো কমিটিগুলি। গ্রামের চারপাশে যে ধানের খেত রয়েছে, সেই আমন ধানের খেত পাহারা দিয়ে গ্রামবাসীরা পুজোর খরচ তোলেন।
আমন ধান পাকার সময়ে প্রতি বছর জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে থাকে। তাই খেতের ধান পাহারা দেওয়ার একটা চল আছে গ্রামাঞ্চলে। পুজো কমিটিগুলি ওই খেত পাহারা দিয়ে সেখান থেকেই পুজোর খরচের একটি বড় অংশ তুলতে পারে। সেটা দিয়েই পুজোর খরচ হয়ে যায়। কিন্তু এবার আমন ধান ফলনের সময় থেকে অনাবৃষ্টির কারণে খেতের ফলন তেমন হয়নি। অনেকের জমির ধান খেতের মধ্যেই শুকিয়ে গিয়েছে। তাই এবার পুজোর খরচ তোলা নিয়ে পুজো কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
দক্ষিণপাড়ার পুজো কমিটির সম্পাদক পরেশ রায় বলেন, “গ্রামের পুজোতে যে খরচ হয়, সেটা তো আর বাইরে থেকে চাঁদা তোলা হয় না। গ্রামের সাধারণ মানুষ ওই পুজোর খরচ জোগাড় করেন। ফলে অনেকটাই খেতের ধান পাহারা দিয়েই পুজোর খরচ উঠে আসত। কিন্তু এবার অনাবৃষ্টির কারণে অনেক কম ধান হবে।” একই ভাবে পশ্চিমপাড়া পুজো কমিটির সম্পাদক নবকুমার ঘোষ বলেন, “আমাদের পাড়ায় প্রায় দেড়শো একর জমির পাহারা দেওয়া হয়। সেখান থেকে প্রতি বছর ৮০০ কুইন্টালের বেশি ধান পাওয়া যায়। কিন্তু এবার সেটা অর্ধেক হবে বলে মনে হচ্ছে না।”
তবে খেতে ধান নেই পুজোর খরচ নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হলেও পুজোর খরচ কমাতে কোন পুজো কমিটির কর্তাদের মত নেই। যেমন উত্তরপাড়া পুজো কমিটির সম্পাদক বাবলু সাহা বলেন, “আমার নিজের প্রায় ১৬ বিঘা জমির অবস্থা খারাপ। জল না থাকার কারণে ফলন ভাল হবে না। জগদ্ধাত্রী পুজো আমাদের গ্রামের বড় উৎসব। তাই পুজোর আয়োজন ছোট করা যায় না। বড় করেই পুজো হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় বাসিন্দারা এবার এগিয়ে এসে কিছুটা চাঁদা বেশি দেবে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, কাগ্রামের জগদ্ধাত্রী পুজোর সুনাম নষ্ট না হতে দেওয়া যাবে না। তবে খেতের ধান পাহারা দিয়ে গ্রামে পুজো আয়োজনের নজির কোথাও নেই বলে জানান ভরতপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিউটি দে। তিনি বলেন, “এত বড় পুজোয়ে চাঁদার কোনও জুলুম নেই। এ বার অনাবৃষ্টির কারণে ধানের ফলনের ক্ষতি হয়েছে। তবে উৎসবে তার কোন প্রভাব পড়বে না।