Rajya Khadya Suraksha Yojana

খাদ্য সুরক্ষা তালিকা নিয়ে ক্ষোভ

Advertisement

মফিদুল ইসলাম

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ০৫:০২
Share:

প্রতীকী ছবি।

একাধিক বার খাদ্য সুরক্ষা তালিকায় নাম তোলার জন্য আবেদন করেও তাতে ঠাঁই হয়নি। মেলেনি রাজ্য বা কেন্দ্রের রেশন কার্ড। ফলে মিলছে না রেশন সামগ্রী। এমন অভিযোগ করছেন হরিহরপাড়া, নওদা এলাকার বহু মানুষ। লকডাউনের জন্য তাঁদের অনেকেরই রোজগার বন্ধ। আবার রেশন সামগ্রীও মিলছে না। প্রায় প্রতিদিনই এই অভিযোগ নিয়ে কয়েকশো মানুষ আসছেন বিডিও অফিস ও খাদ্য ও সরবরাহ দফতরে। তাঁদের বোঝাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারাও।

Advertisement

তবে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘যাঁদের নাম খাদ্য সুরক্ষা তালিকায় থাকার যোগ্য কিন্তু নেই, তাঁদের বিডিও অফিস, পুরসভা থেকে জিআরের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।’’ কিন্তু বহু মানুষেরই দাবি, তাঁরা তা পাচ্ছেন না। হরিহরপাড়ার বিডিও পূর্ণেন্দু স্যানাল বলেন, ‘‘যাঁদের রেশন কার্ড নেই তাদের জিআরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকেও তাঁদের জন্য জিআরের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে জিআরের সামগ্রী উপভোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।’’

১ মে থেকে খাদ্য সুরক্ষা তালিকার অন্তর্ভুক্ত উপভোক্তারা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বরাদ্দকৃত খাদ্যসামগ্রী পাচ্ছেন বিনা মূল্যে। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তাঁরা বিনা মূল্যে রেশন সামগ্রী পাবেন। কার্ড না থাকলেও খাদ্য সুরক্ষা তালিকার আবেদনপত্র মঞ্জুর হলে মিলছে কুপন। সেই কুপন দেখিয়েও মিলছে বিনা মূল্যে রেশন সামগ্রী। কিন্তু অনেক সহায়সম্বলহীন মানুষ একাধিকবার আবেদন করেও খাদ্য সুরক্ষা তালিকায় ঠাঁই পাননি। রেশন সামগ্রী না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তাঁরাই। যেমন, হরিহরপাড়ার বারুইপাড়া বিলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর জয়নাল শেখের বাড়িতে সব মিলিয়ে দশ জন সদস্য। কিন্তু তাঁদের কারওরই খাদ্য সুরক্ষার রেশন কার্ড হয়নি। লকডাউনের কারনে মিলছে না কাজও। ফলে বিপাকে পড়েছে জয়নালের পরিবার। বেশ কিছু কুপন হাতে সম্প্রতি জয়নালের স্ত্রী আশিয়া বিবি হাজির হন বিডিও অফিসে। আশিয়া বিবি বলেন, ‘‘এর আগে তিন বার রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেও রেশন কার্ড পাইনি। ডিলার বলছে তালিকাতেও নাম নেই। তাই রেশনের কিছুই পাইনি।’’ বিডিও জানান, আশিয়াবিবিকে বলা হয়েছে, আজ, সোমবার পঞ্চায়েত দফতরে যেতে। সেখানে নাম নথিভুক্ত করে ত্রাণের সামগ্রী পাবেন তিনি।

Advertisement

তবে আশিয়া একা নন। প্রতাপপুর গ্রামের বাসিন্দা বিধান মণ্ডলেরও একই সমস্যা। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে আমরা চার জন সদস্য। এক জনেরও রেশন কার্ড হয়নি। ফলে আমরা রেশনের জিনিস পাচ্ছি না। লকডাউনে কাজও নেই, ঘরে খাবারও নেই। আমাদের কিভাবে চলবে?’’ নশিপুরের আদরি সর্দারের স্বামী আলিম সর্দার রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। লকডাউনের ফলে বন্ধ রয়েছে তাঁর কাজ। পরিবারে চারজন সদস্য হলেও কার্ড হয়েছে মাত্র এক জনের। তিনিও এদিন প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে হাজির বিডিও অফিসে। আদরি বলেন, ‘‘সবার জন্য রেশনকার্ডের জন্য ফর্ম ভরেছিলাম। আর কার্ড এসেছে মাত্র এক জনের। পাঁচ কেজি চালে চার জনের কদিন চলবে বলুন?’’

এ রকম অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিন কয়েকশো মানুষ আসছেন বিডিও অফিসে। জেলা খাদ্য নিয়ামক সাধন কুমার পাঠক বলেন, ‘‘আবেদন পত্রে ত্রুটির কারণে হয়তো আবেদন মঞ্জুর হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের ফের আবেদন করতে বলা হচ্ছে। যাঁরা খাদ্য সুরক্ষা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য অবশ্যই তাদের নাম নথিভুক্ত হবে।’’

কিন্তু এই দুর্দিনে তাঁরা খাবেন কী?

জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন বলছেন, ‘‘এই দুর্দিনে সাধারণ মানুষ না খেয়ে থাকবেন এটা হবে না। রেশন সামগ্রী না পেলেও তাদের জিআরের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া রেশন ডিলারদের বলা হয়েছে প্রতিটি দোকানে খাদ্য সুরক্ষা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন উপভোক্তাদের তালিকা দেওয়ার জন্য, যাতে আগামী মাস থেকেই তাঁদের জন্য রেশন সামগ্রী বরাদ্দ করা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন