চোলাইয়ের নামগন্ধ নেই, নজর আছে জারি

বিষমদে ১২ জনের মৃত্যুর পরে শান্তিপুরে প্রান্তিক গ্রাম চৌধুরীপাড়ায় পুলিশ ও প্রশাসন সচেতনতা প্রচারের কাজ শুরু করেছে। শুরু হয়েছে নজরদারিও। রবিবার গ্রামে যান শান্তিপুর থানার ওসি এবং অন্য পুলিশকর্মীরা। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে ফের তাঁদের নেশা মুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।

Advertisement

সম্রাট চন্দ 

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

পুলিশের কর্তা জিগ্যেস করলেন— “গ্রামের কেউ আর মদের নেশা করছেন না তো?” ভিড়ের মধ্যে থেকে উত্তর এল— ‘‘না, স্যর।’’

Advertisement

ফের গলা তুললেন অফিসার— “এলাকায় কেউ মদ খেলে মহিলারা যাঁরা আছেন, বাধা দেবেন।” ভিড় থেকেই উত্তর এল, “আমরা সবাইকে বলছি, কেউ যেন অন্য কোথাও গিয়েও লুকিয়ে মদ না খেয়ে আসে।”

বিষমদে ১২ জনের মৃত্যুর পরে শান্তিপুরে প্রান্তিক গ্রাম চৌধুরীপাড়ায় পুলিশ ও প্রশাসন সচেতনতা প্রচারের কাজ শুরু করেছে। শুরু হয়েছে নজরদারিও। রবিবার গ্রামে যান শান্তিপুর থানার ওসি এবং অন্য পুলিশকর্মীরা। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে ফের তাঁদের নেশা মুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা। গ্রামবাসীকে খাওয়ানোর জন্য তাঁরা ফলও নিয়ে গিয়ে‌ছিলেন। সে সব বিলি করা হয়।

Advertisement

যাঁরা বিষমদে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন। তবু সদ্য মৃত্যুমিছিল দেখা এই গ্রামে শোক এখনও টাটকা। এখন নিয়মিত মোতায়েন থাকছেন সিভিক ভলান্টিয়ার, পুলিশ কর্মীরা। অনেকে নৃসিংহপুরঘাট পার হয়ে কালনায় যান নানা কাজে। ফেরার পথেও ফেরিঘাটে নজরদারি চলছে। দেখা হচ্ছে কেউ মদের বোতল নিয়ে বা মদ্যপান করে ফিরছেন কিনা। প্রান্তিক এই গ্রামে রাস্তাঘাট ও অন্য নানা উন্নয়নের উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের নামের তালিকা করে সরকারি চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।

ওই ঘটনার পরে বারবার যেমন ছুটে গিয়েছেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা, তেমনই শিক্ষা নিয়েছেন গ্রামবাসীরাও। চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা সুবল মাহাতো যেমন বলছেন, “নেশা করতাম, তবে এক মাস ধরে আর ওই বিষ ছুঁয়ে দেখছি না।”

চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা, নৃসিংহপুর হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মনীষা মাহাতো বলেন, “গ্রামে এখন যে পরিবেশ রয়েছে, তাতে লোকে মদ্যপানের নেশা থেকে দূরে রয়েছেন অনেকটাই। আমাদের চাকরির পরীক্ষার প্রশিক্ষণের জন্য নামের তালিকা নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলে তো ভালই।”

বিষমদ কাণ্ডে স্বামী ভুটান মাহাতোকে হারিয়েছেন মেনকা মাহাতো। তিনি বলছেন, “এখন এই এলাকায় আর মদের সমস্যা নেই। তবে প্রশাসন যদি আরও আগে এই সচেতনতা তৈরির কাজ করত আর নজরদারি বাড়াত, তা হলে হয়তো আমার স্বামীকে হারাতে হত না।” ভুটানের বৌদি ফুলেশ্বরী মাহাতো, গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ মাহাতোরা বলছেন, “এখন গ্রামের পরিবেশ আগের থেকে অনেকটাই ভাল হয়েছে। মদ্যপানের নেশা থেকেও সরে এসেছেন অনেকে। কিন্তু প্রশাসন যদি আগে এ ভাবে সক্রিয় হত, এই দিন দেখতে হত না কাউকেই।”

শান্তিপুরের বিডিও সুমন দেবনাথ বলেন, “চৌধুরীপাড়া এলাকায় নানা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা যেমন হয়েছে, তেমন গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন