আটক: চরে পড়ে বালি ভর্তি বস্তা। —নিজস্ব চিত্র।
শীতে জল হারাতেই ভাগীরথীর বুকে জেগে উঠেছিল চর। আর, সেই চরের দিকে চোখ পড়েছিল মাটি-মাফিয়াদের।
চরের মাটি, বালি বস্তা বন্দি হয়ে অবাধে পাচার হচ্ছিল কখনও ট্রাক্টরে কখনও বা নৌকায়। কপালে ভাঁজ ফেলেছিল লাগোয়া গ্রাম গয়েশপুরের বাসিন্দাদের। নদী পাড়ে তাঁদের গ্রামটা হারিয়ে যাবে নাতো! আতঙ্কে ভুগতে থাকা গ্রামবাসীরা মরিয়া হয়ে সেই মাটি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে নিজেরাই একজোট হয়েছেন। চরে গিয়ে আটকে দিয়েছেন মাফিয়াদের কাজকর্ম।
গ্রামের মানুষদের একরোখা এই মেজাজ দেখে ভূমি দফতরের কর্তারাও বুধবার নড়েচড়ে বসেছেন। বুধবার বার সকালেই সদলবলে নতুন জেগে ওঠা চরে যান তাঁরা। ভগবানগোলা এক নম্বর ব্লক আধিকারিক প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিকেলেই ওই ঘটনা জানতে পেরেছি। এলাকার রেভিনিউ ইন্সপেক্টরকে সরজমিনে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’
বিডিও লোপ সাং সেরিং বলেন, ‘‘খবরটা পেলাম, বিএলএলআরও-কে সঙ্গে নিয়ে যৌথ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব অচিরেই।’’
স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, চরের অদূরেই রয়েছে কাবিলপুর গ্রাম। সে গ্রামের, সেন্টু শেখ নদীর পাড় বাঁধানোর নামে এক ঠিকাদারের কাছে ওই মাটি বিক্রি করছিল কিছু দিন ধরেই। গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের সামনে সে কথা কবুলও করেছে সে, ‘‘আপত্তি যখন উঠেছে, তখন আর মাটি কাটার কাজ ওখানে করব না।’’ অনুমতির তোয়াক্কা না করে তা হলে এত দিন মাটি তুললেন কেন? সে প্রশ্নের জবাব অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন সেন্টু শেখ। পুলিশ গ্রামে গিয়ে তার দেখাও পায়নি বলে জানা গিয়েছে।
সাগরদিঘি ও লালগোলার সীমানা ঘেঁষা ভগবানগোলার ললিতকুড়ি মৌজায় ভাগীরথীর কোলে ওই চর জাগছিল বছর কয়েক ধরেই। নদীর কোলেই গয়েশপুর গ্রাম। খানিক দূরে কাবিলপুর। কাবিলপুর গ্রামের ভাগীরথী নদী পাড়ের ভাঙনরোধের কাজ চলছে জনা কয়েক ঠিকাদারের অধীনে। নদীভাঙন প্রতিরোধের ওই কজের জন্য মাটি দরকার। বস্তা বোঝাই সেই মাটি নদী পাড়ে ফেলে বাঁধের প্রাথমিক কাজ করা হয়। সদ্য জাগা চর থেকেই সেই মাটি নিয়ে যাচ্ছিল ঠিকাদারেরা।
গয়েশপুরের যুবক সাদরুল শেখ বলেন, ‘‘ তা বলে যেখান থেকে হোক মাটি কাটলেই চলে? নতুন চরের মাটি কাটলে ভবিষ্যতে নদী ভাঙনে বিপন্ন হবে চর গয়েশপুর। তাই গ্রামের সবাই এককাট্টা হয়ে পাচার রুখে দিয়েছি।’’