ইদে ফিরছে চাঁদ, সীমান্তে শুধুই ঘরে ফেরার গান

চোখ কচলে ট্যালট্যালে চায়ে চুমুক দিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তবেই রেহাই পেয়েছেন ডোমকলের সামিরুল‌ ইসলাম। পেশায় নির্মাণ শ্রমিক সামিরুল শুক্রবার কেরল থেকে বাড়ি ফিরেছেন প্লেনে। এবং সেই কারণেই বছর বত্রিশের ওই যুবক পাড়ায় এখন রীতিমতো ভিআইপি।

Advertisement

সুজাউদ্দিন ও কল্লোল প্রামাণিক

ডোমকল ও করিমপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ০২:১৫
Share:

ফেরা। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

তখনও সামিরুলের ঘুম ভাঙেনি। এ দিকে বাড়ির দাওয়ায় এসে হাজির ইয়ার-দোস্ত ও পড়শিরা। অগত্যা বিছানা ছেড়ে বাইরে আসতেই প্রশ্নের ঝড়—

Advertisement

পাশের বাড়ির প্রৌঢ়া, ‘উই উঁচু দিয়ি আসতি তুর ভয় লাগেনি?’

ওপাড়ার মাছ বিক্রেতা, ‘তা বাপ, জানলার ধারে সিট পেয়িছিলি তো?’

Advertisement

খুদে ভাইপো, ‘চাচা, পেলেনে হরেন দেয়?’

ছেলেবেলার বন্ধু, ‘কী ব্যাপার বুল দিকি! টেরেন ছেইড়ি একেবারে উইড়ি বাড়ি এলি যে?’

চোখ কচলে ট্যালট্যালে চায়ে চুমুক দিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তবেই রেহাই পেয়েছেন ডোমকলের সামিরুল‌ ইসলাম। পেশায় নির্মাণ শ্রমিক সামিরুল শুক্রবার কেরল থেকে বাড়ি ফিরেছেন প্লেনে। এবং সেই কারণেই বছর বত্রিশের ওই যুবক পাড়ায় এখন রীতিমতো ভিআইপি।

শনিবার সকালে কলে জল আনতে গিয়ে সামিরুলের মা সমেজান বেওয়া বেশ গর্ব করেই বলেছিলেন, ‘‘পোলাডা পেলেনে এয়িচে তো। বড় ধকল গিয়েছে।’’ বিমান-বেগে তামাম পাড়ায় কথাটা ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। সমেজান এ দিন সবাইকে চা খাইয়ে বিদায় দিয়েছেন। কিন্তু কথা দিতে হয়েছে, ইদের দিন তিনি সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবেন।

আরও পড়ুন:পায়ে পায়ে ছুটছে বাঙালি বধূর ‘জয়ী’

শুধু ডোমকল নয়, নদিয়া-মুর্শিদাবাদের সীমান্ত ঘেঁষা আটপৌরে গ্রামগুলোতে এখন শুধুই ঘরে ফেরার গান।

সম্বচ্ছরে এই একটা সময়। ইদ-উল-ফিতর। বিদেশ-বিভুঁই থেকে ঘরের চাঁদ ঘরে ফেরে। খুশির বাঁধ ভাঙে সাদাকালো সীমান্তে।

তবে ইদের সময় বাড়ি ফেরাটা বেশ ঝক্কির ব্যাপার। মুরুটিয়ার রসিকপুরের সাবরান শেখ, হোগলবেড়িয়ার কামাল মণ্ডলেরাও কেরলে কাজ করেন। দুজনেই দিন পাঁচেক আগে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই সময়টা ট্রেনে বাসে সাঙ্ঘাতিক ভিড় থাকে। সোমবার তাঁরা চেন্নাই থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন। বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরেছেন। সামিরুল জানাচ্ছেন, সেই ঝক্কি এড়াতেই তিনি এ বার সটান প্লেনের টিকিট কেটে ফেলেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ট্রেনে বাড়ি আসতে দু’তিন দিন সময় লাগে। সেই ক’দিন অতিরিক্ত কাজ করে হাজার দু’য়েক টাকা রোজগার করেছি। অনেক আগে প্লেনের টিকিট কাটায় কিছুটা সস্তাতেই হয়ে গিয়েছিল।’’ সামিরুলের মতো অনেকেই এখন তাই উড়ে বাড়ি আসছেন।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাড়ার মোড়ে মোড়ে ভালই ভিড়। বাস থেকে নেমে চায়ের দোকানদারকে কেউ জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘চাচা, এই দু’বছরে চুল তো সব পেকে গেল গো!’’ ফোন কানে নিয়ে কেউ বলছেন, ‘‘টোটোতে উঠে পড়েছি। এই এলুম বলে!’’

শুধু ফোন হাতে চুপটি করে বসে আছেন রসিকপুরের রাজেদা বিবি। স্বামী মাদার মোহলদার ইদের জন্য টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি আসতে পারবেন না। এ দিকে পাড়ায় কোনও গাড়ি এসে থামলেই একছুটে সদর দরজায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে রাজেদার দুই মেয়ে। তারপর মনখারাপ করে ফের রাজেদার কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান করছে, ‘‘সব্বাই চলে এল! আব্বু কখন আসবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন