Durga Puja 2022

শব্দহীন জগতে পুজো আসে নিঃশব্দ অনুভবে

নবদ্বীপ রানীর চড়ার বাসিন্দা বছর চুয়াল্লিশের গোপাল দেবনাথ জন্ম থেকেই মূক-বধির। উৎসবকে তিনি উপভোগ করেন দৃশ্যানুভবে।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র তাঁর শিহরণ জাগানো কণ্ঠে উড়িয়ে দেন উৎসবের নীলকন্ঠ পাখী। রেডিয়োয় ঘুম ভাঙানিয়া চণ্ডীপাঠ জানান দেয় দুয়ারে দুগ্গার আগমনী। তর্পণের মন্ত্রে মুখর হয় নদীর ঘাট। পুজোর ঢাকে বোধনের বোল।

Advertisement

কিন্তু উৎসবের এমন বহুমাত্রিক শব্দের সঙ্গে পরিচয় নেই বহু মানুষের। শব্দ ও বাকহীন জগতে তাঁদের বসবাস। শরৎ আর পুজো তাঁদের কাছে ধরা দেয় কাশফুল, শিউলি, নীল আকাশ, পেঁজা-তুলো মেঘ, দোকানে উপচে পড়া নতুন জামাকাপড়ের পসরার দৃশ্যবোধে। ঢাকের আওয়াজ, অষ্টমীর অঞ্জলীর মন্ত্র, পুজোর গান বা ‘বল দুগ্গা মাইকি’-র উল্লাসরবের সঙ্গে অপরিচিত এই মূক-বধির মানুষদের কাছে দুর্গাপুজো অনুভবের।

নবদ্বীপ রানীর চড়ার বাসিন্দা বছর চুয়াল্লিশের গোপাল দেবনাথ জন্ম থেকেই মূক-বধির। উৎসবকে তিনি উপভোগ করেন দৃশ্যানুভবে। তাঁর মা মিতা দেবনাথ বলেন, “আমাদের সঙ্গে ওর পুজোর অনেক ফারাক। যেটুকু চোখে দেখে সেই মণ্ডপ, ঠাকুর, আলো, লোকজন ওর কাছে পুজো। ঢাক, মাইক, বাজি, কিছুই ও বুঝতে পারে না।”

Advertisement

পাড়ার প্রতিমা মণ্ডপেই তৈরি হয়। বাঁশের খাঁচা বাঁধা শুরুর সঙ্গে-সঙ্গে গোপাল বুঝতে পারেন যে, পুজো কাছে এসে গিয়েছে। চেনা মানুষদের সঙ্গে আকারে-ইঙ্গিতে ভাব বিনিময়ের আপ্রাণ চেষ্টা করলেও বাবা, মা আর দিদি ছাড়া সে ভাবে কেউ বুঝতে পারে না তাঁর আঙুলের ভাষা। বাবা কাজল দেবনাথ এক সময়ে ব্যবসা করতেন। বয়সের কারণে এখন বাড়িতেই। বলেন, “সামাজিক ভাবে ও অনেকটা বিচ্ছিন্ন। যোগাযোগ শুধু ওর মতো কিছু মানুষের সঙ্গেই। ওরা ওদের মতো করে পুজো কাটায়। জানি না আমাদের অবর্তমানে ওর কি হবে।”

সে ভাবে লেখাপড়া না শিখলেও গোপাল স্মার্টফোনে ছবি তুলতে এবং পাঠাতে শিখে নিয়েছেন। কয়েক জন বন্ধু-বান্ধবীও আছে তাঁর। সব থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু আনন্দবাসের মানব ঘোষ। মানবও মূক-বধির। দু’জনে আঙুলের ভাষায় আড্ডা দেন। পুজোর সময় সাইকেল চালিয়ে মানব চলে আসেন গোপালের বাড়িতে। কখনও তাঁর বাড়ি যান গোপাল। দু’জনে ভিডিয়ো কলও করেন। মানবের মা সুচিত্রা ঘোষ বলেন, “শুনতে বা কথা বলতে না পারলে কী হবে, পুজো নিয়ে খুব উৎসাহ ওর। নতুন পোশাক পরে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো চাই। তবে ওর সব বন্ধুই মূক-বধির। পুজো ওদের কাছে শব্দহীন। সবাই পুজোর ক’টা দিন খুব খুশি আর উত্তেজিত থাকে।”

শব্দবিহীন শুধু চোখে দেখা দুর্গাপুজো গোপাল, মানবদের কাছে পূর্ণাঙ্গ রূপে ধরা দেয় না, তবু উৎসব ছুঁয়ে যায় তাঁদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement