মহরমের মিছিলের আগে দরগায় মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন হিন্দু ও মুসলমান—দুই সম্প্রদায়ের মানুষই। রবিবার কৃষ্ণনগরের চাঁদসড়কপাড়ায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
তাসার বোল উঠতেই বাইরে বেড়িয়ে এলেন নিতাই সাহা। ভিড়টার দিকে এগিয়ে গিয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন, “কিরে তোরা তৈরি তো?”
রবিবার সকাল থেকে মহরমের শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলছে। দরগার মাঠে তাসার সঙ্গে লাঠি ঘোরাচ্ছে কিছু কিশোর। ব্যস্ত ঘোরাঘুরি করছেন চাঁদসড়ক দরগাতলা মহরম কমিটির সম্পাদক আখতার শেখ। নিতাইবাবুর সামনে এসে পড়তেই বলেন, “এ বার একটু তাড়াতাড়ি বের হতে হবে কাকা। পুলিশ অনুরোধ করছে।”
মোড়ের মাথায় একে একে ভিড় জমান জাহ্নবী শেখ, বিমল সাহারা। আখতার শেখ বলেন, “চাচা এ বার আমরা অস্ত্র নিয়ে মিছিল করছি না।’’ ঘাড় নে়ড়ে সম্মতি জানান সকলে। নিতাই সাহা, বিমল সাহাদের মিছিলে হাঁটা এই প্রথম নয়। বছরের পর বছর ধরে তাঁরা মহরমের শোভাযাত্রায় পা মিলিয়ে আসছেন। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অনুপম বিশ্বাস বলেন, “এই এলাকায় হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষের সংখ্যা সমান। সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে থাকেন।’’
চাঁদসড়কপাড়া দরগার মাঠ আর গ্রিন ক্লাবের মহিলা সমিতির পুজো মণ্ডপের মাঝখানে একটা নিচু লোহার রেলিং। শনিবার থেকে মণ্ডপ ফাঁকা। রবিবার দুপুর থেকে সেই ভিড়টা চলে এসেছে দরগার সামনে। সন্ধ্যা নামার আগেই শুরু হয়ে যায় তাসার বাদ্যি। লাঠি হাতে ভিড় করেন যুবকেরা। কমিটির লোকেরা তাদের সাবধান করেন, “লাঠিটা ঠিক ভাবে খেলিস বাবা। দেখিস যেন কারও গায়ে না লাগে।” সন্ধে নামার আগেই দরগার সামনে ভিড় জমতে থাকে। সেই ভিড়ে মিশে মহিলা পরিচালিত বারোয়ারির সম্পাদিকা অপর্ণা সাহা। বারোয়ারির কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে তিনি এগিয়ে যান মহরমের মিছিলের সামনে। অপর্ণা বলেন, “আমাদের পুজোয় মুসলিম মহিলারাও আসেন।”