Juranpur JoyDurga Festival

জুড়ানপুরে জয়দুর্গার টানে ভিড় জমান ভক্তেরা

বর্ধমান জেলার কাটোয়া থেকে গঙ্গা পার হয়ে ঈশান কোণে চার মাইল দূরে নদিয়া জেলার কালীগঞ্জ থানার অন্তর্গত জুড়ানপুর গ্রামে উত্তর প্রান্তে যে দেবী বিদ্যমান, তিনিই জয়দুর্গা রুপে পুজিত।

Advertisement

সন্দীপ পাল

কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩ ১০:১২
Share:

কালীগঞ্জের জুড়ানপুর কালীবাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

গ্রামের অনেকেই জানেন না পুজো শুরুর দিনক্ষণ। বর্তমানে জয়দুর্গা ট্রাস্টি বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় পুজো হয়। মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক সমীরণ দে জানান, বহুকাল ধরেই জুড়ানপুরে আদ্যা দেবীর সঙ্গে ভৈরবের পুজো হয়ে আসছে।

Advertisement

কালীগঞ্জের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত জুড়ানপুর। জগতখালি বাঁধের কাছেই সবুজে ঘেরা পঞ্চবটী বটবৃক্ষের নীচে অবস্থান বিগ্রহের। সামনেই ভৈরবের স্থান। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কৃষ্ণানন্দ নামে এক তান্ত্রিক একটি তন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেন। খড়দহের প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস ও রামতোষণ রায় এই তন্ত্র গ্রন্থ রচনার জন্য প্রচুর অর্থ সাহায্য করেন। তাই প্রাণকৃষ্ণের প্রাণ আর রামতোষণের তোষন নিয়ে সেই গ্রন্থের নাম হয় ’প্রাণ তোষনি’। তাতে ৫২টি মহাপীঠের উল্লেখ আছে। যার একটি পিঠ এই জুড়ানপুরের কালীবাড়ি।

বর্ধমান জেলার কাটোয়া থেকে গঙ্গা পার হয়ে ঈশান কোণে চার মাইল দূরে নদিয়া জেলার কালীগঞ্জ থানার অন্তর্গত জুড়ানপুর গ্রামে উত্তর প্রান্তে যে দেবী বিদ্যমান, তিনিই জয়দুর্গা রুপে পুজিত। তার পার্শ্ববর্তী মন্দিরে শিবলিঙ্গ ভৈরব নামেই পূজিত হন। বিষ্ণুর চক্রে ছিন্ন সতীর মস্তকের উপরিভাগ বা করোটি এখানে পতিত হয়েছিল বলে তন্ত্রে কথিত। বহু সাধক এখানে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন বলেই বিশ্বাস স্থানীয়দের।

Advertisement

সমীরণেরা জানান, নাটোরের মহারাজা রামকৃষ্ণ রায়ের নাম জুড়ানপুর ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সঙ্গে জড়িত। কথিত আছে, স্বপ্নে দেবীর আদেশ পেয়ে রানি ভবানীর পোষ্যপুত্র এসেছিলেন জুড়ানপুরে। তার নীচ দিয়ে তখন ভাগীরথী প্রবহমান। তৎকালীন নদী জরিপের নকশায় তা দেখা যায়। সেই গঙ্গাতীরে রামকৃষ্ণ তন্ত্রের আশ্রম তৈরি করেন। সাধনায় তার সঙ্গ দিয়েছিলেন উত্তরসাধক ভোলা। পরে রামকৃষ্ণ শবসাধনা শুরু করলে ভোলাই শব জোগাড় করার দায়িত্বে ছিলেন। তার জন্য তাঁকে আশপাশের শ্মশানে ছুটতে হত। ১৭১৫ সালে রামকৃষ্ণ দেহ রাখেন। পরে তারাপীঠ থেকে আগত বহু তান্ত্রিক এখানে এসে সাধনা করে যান। তাঁদের মধ্য উল্লেখযোগ্য স্বামী কুলানন্দ, নটুবিহারী মৈত্র প্রমুখ। শোনা যায়, ব্যামাক্ষ্যাপাও এখানে এসে সাধনা করেন ও তারাপীঠে সিদ্ধিলাভ করেন। তাঁর শিষ্য তারা ক্ষাপা এই মন্দিরে দীর্ঘদিন ছিলেন।

সেই অতীতকাল থেকেই এখানে দেবী পূজিত হয়ে আসছেন জয়দুর্গা নামে। বছরের অন্য সময়গুলিতে নিত্যপূজা হলেও পৌষ মাসে মেলার আয়োজন হয়। এ ছাড়াও দীপান্বিতা অমাবস্যায় তন্ত্রসাধনা মেনেই জয়দুর্গা কালীরূপে পূজিত হয়ে আসছেন। সেই পুজো দেখতে নদিয়া জেলার তো বটেই, পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, এমনকি কলকাতা থেকেও দর্শনার্থীরা এসে ভিড় জমান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন