ইলিশের আবদার রাখতে ঘুম ছুটেছে গঙ্গাপাড়ের

জামাইষষ্ঠীর দিনে জামাইয়ের পাতে ইলিশ তুলে দিতে না পেরে নদিয়ার শাশুড়িদের আক্ষেপ, ‘‘জামাইয়ের পাতে পদ্মার ইলিশ না থাকলে মান থাকে, বলুন তো!’’

Advertisement

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩১
Share:

ইলিশ ছেয়েছে বাজার। ফাইল চিত্র

সর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, কুমড়ো দিয়ে ইলিশের ঝাল, ইলিশের মাথা দিয়ে চাল কুমড়ো...।

Advertisement

বাজারে বেরিয়ে গত কয়েক দিনে বাড়িতে ইলিশের কী কী পদ রান্না হয়েছে তার ফিরিস্তি দিচ্ছিলেন ফরাক্কার সাইসুদ্দিন শেখ।

এত পদ?

Advertisement

বেজার মুখে বছর পঞ্চাশের ওই প্রৌঢ় বলছেন, ‘‘পদ না বলে বিপদ বলুন। বাড়িতে ইলিশ খেতে খেতে হাঁফিয়ে উঠছি। এ দিকে, বাইরের আত্মীয়-স্বজনদের আবদারের শেষ নেই। কারও চাই দেড় সেরি, কারও আবার বাছবিচার নেই। ইলিশ হলেই হল। কিন্তু যা উঠছে সবই তো ছোট।’’

কিন্তু ছোট ছোট ইলিশ তো ধরা নিষেধ। যা শুনে হাসছে ফরাক্কা, ‘‘আরে ছাড়ুন তো। নিয়ম আছে খাতা-কলমে। আর ইলিশ আছে জলে।’’ আর মৎস্যজীবীরা বলছেন, ‘‘ইলিশ তো ইলিশই! তার আবার ছোট বড় কী মশাই? পাচ্ছি তাই ধরছি। আর এ নিয়ে তো কেউ কোনও নিষেধও করেনি।’’

অতএব, গঙ্গায় জাল ফেললেই উঠে আসছে দু’শো থেকে আটশো গ্রাম ওজনের রূপোলি শস্য। কাউকে জিজ্ঞাসাও করতে হয় না, মাছ কেমন পড়েছে। জাল গোটাতে গোটাতে মৎস্যজীবীরাই আপনমনেই বিড়বিড় করেন, ‘‘জবর মাছ পড়েছে গো।’’

দিন কুড়ি ধরে এমনটাই চলছে। ফরাক্কা বাজারে গড়ে চার মণ ইলিশের আমদানি হচ্ছিল। রবি ও সোমবার একটু কমে দাঁড়িয়েছে ১১০ কেজি। আর এই ইলিশের জোগানের দাপটে বিপাকে পড়ে গিয়েছে অন্যান্য মাছ ও মুরগির বাজার।

পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী ভোলানাথ সরকার বলছেন, ‘‘সপ্তাহ দু’য়েক থেকে দিশি রুই, কাতলা মাছের বাজার তলানিতে। চালানি মাছ একেবারে বন্ধ। ছোট ইলিশ মিলছে ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। তার থেকে বড় হলে দাম একটু বেশি। ইলিশের এই ঢল আরও দিন সাতেক থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।’’ ফরাক্কা ও লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘এক কেজি পোলট্রি মুরগির দাম ১২০ টাকা। আবার ইলিশও ১২০। ইলিশ মাছ না কিনে আমরা মুরগি কিনতে যাব কোন দুঃখে?’’

যা শুনে হাসছেন নদিয়ার পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা শঙ্কর মণ্ডল, আলাহিম মণ্ডলেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘একটা সময় এই পদ্মাও আঁজলা ভরে ইলিশ দিয়েছে। কোনও বাছবিচার না করে সেই ইলিশ আমরাও খেয়েছি। তার ফল এখন হাড়ে হাড়ে ভুগতে হচ্ছে। বাড়ির পাশে পদ্মা এখনও আছে। কিন্তু সেই ইলিশের আর দেখা নেই।’’

জামাইষষ্ঠীর দিনে জামাইয়ের পাতে ইলিশ তুলে দিতে না পেরে নদিয়ার শাশুড়িদের আক্ষেপ, ‘‘জামাইয়ের পাতে পদ্মার ইলিশ না থাকলে মান থাকে, বলুন তো!’’ অথচ একটা সময়, বাবাজীবনকে ইলিশের হাজারও পদ খাইয়ে বিদায় দেওয়ার সময়েও হাতে তুলে দেওয়া হতো দেড়-দু’সের ওজনের ইলিশ। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও প্রায়ই ইলিশ পাঠাতেন পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা।

এখন যেমন পাঠাচ্ছে ফরাক্কা। বাবার বাড়ির দেশে ইলিশের বান ডাকার খবর পেয়ে ফোনটা এসেছিল রামপুরহাট থেকে। সাতসকালে ফোন ধরেই হাসনাত খানকে শুনতে হয়েছে, ‘‘ও আব্বু, বলি, ইলিশ কি তোমরা একাই খাবে?” হাসনাত ভারী লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলেন মেয়ের কথা শুনে। তারপরে তিনি বলেছেন, ‘‘দুঃখ করিসনি বিটি, কালই একটা ভাল দেখে ইলিশ পাঠাব।’’ মেয়ের আবদার বলে কথা! বাজার খুঁজে আটশো গ্রামের একটা ইলিশ মেয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন হাসনাত।

স্টেশন লাগোয়া এক হোটেলের মালিক রাজু হালদার বলছেন, ‘‘সর্ষে ইলিশের চাহিদা সবথেকে বেশি। ইলিশ ভাজার পাশাপাশি ইলিশের ডিমের বড়াও চাইছেন অনেকে।”

ইলিশে ম ম ফরাক্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন