খুন নাকি আত্মহত্যা, উঠছে প্রশ্ন

দুই বোনের মৃত্যু, ধন্দে সুতির গ্রাম

ওই দুই কিশোরীর পরিবারের সদস্যদের দাবি, ঘরে একটি কাঠের চেয়ারের উপরে প্লাস্টিকের চেয়ার ছিল। তার উপরে রাখা ছিল দু’টি বালিশ। তাঁদের অনুমান, সেখানে উঠেই দুই বোন সিলিঙের হুক থেকে গলায় ওড়না দিয়ে ঝুলে পড়েছিল।

Advertisement

বিমান হাজরা

সুতি: শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:১২
Share:

ফাইল চিত্র।

দুই বোনের মৃত্যু ঘিরে রহস্য ক্রমেই বাড়ছে।

Advertisement

ওই দুই কিশোরীর পরিবারের সদস্যদের দাবি, ঘরে একটি কাঠের চেয়ারের উপরে প্লাস্টিকের চেয়ার ছিল। তার উপরে রাখা ছিল দু’টি বালিশ। তাঁদের অনুমান, সেখানে উঠেই দুই বোন সিলিঙের হুক থেকে গলায় ওড়না দিয়ে ঝুলে পড়েছিল।

অন্য দিকে, রবিবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়, এটা খুন নাকি আত্মহত্যা। বরং, ওই দু’জনকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে। তাঁদের শরীরের একাধিক জায়গায় আঁচড়ের চিহ্ন মিলেছে।

Advertisement

জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রাথমিক ভাবে দু’জনকে নির্যাতন করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। এটা খুন নাকি আত্মহত্যা তা স্পষ্ট নয়। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে তদন্তে যা উঠে আসবে সেই মতোই পদক্ষেপ করা হবে। প্রয়োজনে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করবে।” জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলেই বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট হবে। তবে পুলিশ সব দিকই খতিয়ে দেখছে।’’

রবিবার সকালে পরমা দাস (১৯) ও অপর্ণা দাসের (১৭) দেহ সুতির গোঠা গ্রামে তাঁদের মামার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরমা অরঙ্গাবাদ ডিএন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। অপর্ণা গ্রামের স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। তাঁরা পাঁচ বোন এক ভাই। বাবা সর্বেশ্বর দাস পেশায় বিস্কুট বিক্রেতা। বাড়িতে অভাবের কারণেই অপর্ণা মামার বাড়িতে থেকেই লেখাপড়া করতেন। তাঁদের বাড়ি ও মামার বাড়ি একই পাড়ায়। দিন পনেরো আগে মামার বাড়িতে এসে থাকতে শুরু করেন পরমাও।

কিশোরীদের মামার বাড়ির অবস্থা সচ্ছল। মামা উজ্জ্বল দত্তের সোনার দোকান রয়েছে। দাদু সুবল দত্ত প্রাক্তন ডাককর্মী। দিদা প্রাক্তন অঙ্গনওয়াড়িকর্মী। তাঁদের জমিজিরেতও আছে। মামার বাড়িতে মামা, মামি, দাদু, দিদা ও তাঁদের বছরখানেকের নাতির সঙ্গেই থাকতেন ওই দুই কিশোরী। ঘটনার পরে সুবল দত্ত জানান, এ দিন স্ত্রীর সঙ্গে প্রাতর্ভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরে তিনি দুই নাতনির নাম ধরে ডাকেন। কিন্তু তাঁরা না ওঠায় তিনি তাঁদের ঘরের দরজায় ধাক্কা দেন। তাঁর দাবি, ‘‘সাড়া না পেয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে দেখি, মশারি খোলা। বিছানায় কেউ নেই। ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলছে দু’জনে। চিৎকারে পড়শিরা ছুটে আসে। দু’জনকে নামানো হয়। ততক্ষণে সব শেষ।’’

এ দিন পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দুই কিশোরীর মোবাইল, দু’টি ওড়না বাজেয়াপ্ত করেছে। সিল করে দেওয়া হয়েছে তাঁদের ঘরও। তাঁদের মামার বাড়ির লোকজনদের দাবি, ওই দুই কিশোরীর কাছে মোবাইল কী করে এল তা তাঁরা জানেন না। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইলের সূত্রে ধরেও বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট হবে।

এ দিন দুই মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাবার বাড়ি চলে আসেন মা সীমা দাস। তিনি বলছেন, ‘‘মেয়ে দু’টো ভাল থাকবে বলেই এখানে এসেছিল। সব শেষ হয়ে গেল।’’ আর ওই দুই কিশোরীর মামা উজ্জ্বল দত্ত বলছেন, ‘‘রাতে দিব্যি খাওয়াদাওয়া সেরে ঘরে ঢুকেছিল ওরা। তার পরে কী ভাবে কী হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছি না।’’

জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘বেশ কয়েকটি প্রশ্ন আমাদের ভাবাচ্ছে। সন্দেহের বাইরে কাউকেই রাখা হচ্ছে না। কিশোরীর পরিবারের সকলের সঙ্গেই কথা বলা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন