গাড়ি চুরি চক্রের অভিযুক্তেরা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
উত্তরপ্রদেশ থেকে ছিনতাই হওয়া দুটি লরিকে সামশেরগঞ্জ থানার ধুলিয়ান ডাকবাংলো মোড়ের একটি গ্যারাজ থেকে শনিবার সন্ধ্যেয় আটক করল পুলিশ। রাতেই ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে গ্রেফতার করা হয় ছিনতাই লরি দুটির ক্রেতা রতন সাহানি ও বরকত হোসেন নামে দুই ব্যক্তিকে। রবিবার দু’জনকেই জঙ্গিপুর আদালতে ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম সাথী মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে হাজির করানো হয়।
জঙ্গিপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী সোমনাথ চৌধুরী জানান, এই চক্রের সঙ্গে ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের দুষ্কৃতী চক্র যুক্ত। ধৃতদের নিয়ে সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশকে সেখানে যেতে হবে বলেই অভিযুক্তদের ১৪ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে চাওয়া হয়। আদালতে তা মঞ্জুর হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘অন্য রাজ্য থেকে গাড়ি, লরি চুরি করে এনে এ জেলায় বিক্রি করছিল চক্রটি। চক্রের সঙ্গে আরও কারা জড়িত তা জানতে ধৃতদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তদন্তে যাবে পুলিশ।’’
সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশ সম্প্রতি গোপন সূত্রে জানতে পারে, ধুলিয়ানের গ্যারাজে দুটি প্রায় নতুন চোরাই লরি জলের দামে কিনে এনে রাখা হয়েছে নতুন করে রঙ করার জন্য। খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যায় ডাকবাংলোর মুরসেদ শেখ ও হিরো পেঁচি নামে দু’জনের গ্যারাজে হানা দিয়ে পুলিশ দুটি লরিকে আটক করে। দুটি লরিতেই বালুরঘাটের নম্বর প্লেট লাগানো ছিল। গ্যারাজের দুই মিস্ত্রি পুলিশকে জানায় লরিগুলির বডি মেরামত করে রঙ করা হবে। আরও জানায়, লরি দুটির মালিক ফরাক্কা ব্যারাজের রতন সাহানি ও বরকত হোসেন। ফরাক্কার পাশেই মালদহে গাড়ির সমস্ত কাজ ভাল ভাবে কম খরচে হয়। তা সত্বেও ধুলিয়ান ডাকবাংলোর গ্যারাজে লরি দুটি রঙ করতে দেওয়ায় পুলিশের সন্দেহ হয়।
শনিবার রাতেই পুলিশ লরির দুই মালিককে ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তাঁদের অসংলগ্ন কথা শুনে পুলিশ নিশ্চিত হয় কোথাও একটা গোলমাল রয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা অপরাধের কথা কুবল করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, রতন সাহানি ৭ লক্ষ টাকায় ঝাড়খণ্ডর বারহারোয়ার কামরুল শেখ, মেহেদিনগরের রফিক সেখ ও মিঠুন শেখের কাছ থেকে কয়েক দিন আগেই একটি গাড়ি কিনেছে। অন্যটির দর দাম চলছে। শুধু তাই নয়, গাড়ি কেনার সঙ্গে সঙ্গে মালদহের ইংলিশবাজার থানার মহাদেব হালদার নামে এক ব্যক্তি লরিগুলির ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর বদলে অন্য নম্বর পাঞ্চ করে দিয়েছে তাতে। তারপর সেই দুটি চোরাই গাড়ি বালুরঘাট মোটর ভেহিকেলস দফতর থেকে গাড়ির উত্তরপ্রদেশের আসল নম্বর বদলে পশ্চিমবঙ্গের নম্বরে রেজিষ্ট্রেশন করিয়ে দেয় মালদহের আঠারো মাইল এলাকার বাবু মিত্র নামে এক ব্যক্তি।
এ দিন পুলিশ গাড়ি দুটি আটক করলে সামশেরগঞ্জ থানায় সেই বালুরঘাটের রেজিষ্ট্রেশন নম্বরের নথিপত্র দেখায় দুই ক্রেতা রতন সাহানি ও বরকত হোসেন। এরপরই গাড়ির কেবিনে তল্লাশি চালাতে গিয়ে পুলিশের নজরে আসে গাড়ির গায়ে লেখা একটি ফোন নম্বর। ওই নম্বরে ফোন করতেই পুলিশের সামনে খুলে যায় সব রহস্যের জট। এরপরই পুলিশ দুই ক্রেতাকেই গ্রেফতার করে। পুলিশ তদন্তে জেনেছে, গাড়ির গায়ে লেখা ফোন নম্বরটি উত্তরপ্রদেশের উমেশ তেওয়ারির। তাঁর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের কুশিনগর জেলার জথাবাজার থানার কিনডারপট্টি গ্রামে। উমেশবাবু সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশকে জানান মাত্র ৫ দিন আগে গত ১৪ জুলাই উত্তরপ্রদেশের মোহনলালগঞ্জ থানা এলাকায় চালককে ছুরি মেরে লরি থেকে ফেলে দিয়ে তাঁর লরিটি ছিনতাই করা হয়।
একই ভাবে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় উত্তরপ্রদেশের ওই এলাকারই বাসিন্দা মহম্মদ আসলাম শেখের গাড়ি চলতি বছরের ৮ জুন রাতে বিহারের ভাগলপুর জেলার নওগাছিয়া থানা এলাকা থেকে একই কায়দায় ছিনতাই করা হয়। দুটি গাড়ির পুরোনো চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বর মিলিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় ধুলিয়ান ডাকবাংলো থেকে উদ্ধার হওয়া ১২ চাকার লরি দু’টিই উত্তরপ্রদেশের ছিনতাই হওয়া লরি। পুলিশের সন্দেহ, এই চক্রই লরি ছিনতাই করে এনে ধুলিয়ানে খোল নলচে বদলে ফেলে তা বিক্রি করছে বিভিন্ন জনের কাছে। অভিযোগ, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ধুলিয়ানের গাড়ির মিস্ত্রি, বডি মিস্ত্রি, গাড়ির পেন্টার, পাঞ্চিং মিস্ত্রি ও পরিবহণ দফতরে গাড়ির নথি পত্র তৈরির দালালেরাও।