প্রতীকী ছবি।
পড়শির বিয়ে, রাতে তাই নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছিলেন পূর্বাশাপাড়ার রাজীব সরকার। বাড়ির বাইরে রেখে গিয়েছিলেন নিজের মোটরবাইক। বাইকের লক ভেঙে ফেললেও তা নিয়ে চম্পট দেওয়ার সুযোগ আর হয়নি। ক্ষোভে মোটরবাইকে আগুন লাগিয়ে ফিরে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
এর দিন সাতেক পরের ঘটনা, রাতে বাড়ি ফিরে রাধিকানগরের অতনু বন্দ্যোপাধ্যায় দেখেন, ঘরের ভিতরে তান্ডব চালাচ্ছে জনাকয়েক অচেনা যুবক। কাঁপা গলায় ‘কে তোমরা?’ জিজ্ঞেস করে অতনুবাবুকে শুনতে হয়েছিল, ‘চিনতে পারছিস না!’ তখনকার মতো পালিয়ে গেলেও, স্থানীয় ব্যবসায়ী অতনুবাবুর অনুমান, ‘‘আমাকে চিনতে পেরেছিল বলেই পালায়। আমি নিশ্চিত ওরা স্থানীয় দুষ্কৃতী।’’ এমনই ছোট-মেজ ঘটনার সাক্ষী, রঞ্জিত রায়, আশিস সরকার, সুকুমার বিশ্বাস, দিলীপ বিশ্বাস, শুভাশিস মোদক কিংবা নবকুমার সাহা। ভুক্তভোগীর এই সংখ্যা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে।
কখনও গ্রিল ভেঙে চুরি, কখনও বাড়ির খিড়কি দরজার তালা গুঁড়িয়ে লুঠ, কখনও বা নিছক দাদাগিরি। বানজেটিয়ার কেশবনগর, রাধিকানগর, দক্ষিণাপণ কিংবা পূর্বাশাপাড়ায় এখন সন্ধে নামলেই দুরু দুরু বুকে দরজায় খিল দিচ্ছেন পাড়া পড়শি। গত এক মাসে এমনই চুরি-দাদাগিরির ঘটনা ১০টি। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন, শুক্রবার রাতে পূর্বাশাপাড়ার প্রভাতী সরকারের বাড়িতে তালা ভেঙে সর্বস্ব ডাকাতি।
মজার ব্যাপার, এক মাস ধরে চলা এই আতঙ্কের রাতের কোনও সুরাহা হয়নি। ধরা পড়েনি কেউ। উল্টে পুলিশ জানিয়েছে, ‘‘কী দরকার বাড়ি ফাঁকা রেখে যাওয়ার, জানেনই তো দিনকাল!’’
স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য কংগ্রেসের নিমাই পাল বলছেন, ‘‘মানুষ কোথায় যাবেন বলুন তো! পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে শুনতে হচ্ছে পরামর্শ, তাদের নড়েচড়ে বসার কোনও লক্ষণ নেই।’’
জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জানান, বানজেটিয়া এলাকায় নিয়মিত পুলিশের টহলদারি গাড়ি থাকে। বলছেন, ‘‘বহরমপুর থানার আইসি-কে নির্দেশ দিয়েছি, একটু খেয়াল রাখতে।’’
রাধিকানগরের সুজয় মণ্ডল বলছেন, ‘‘চেনাশোনা লোকজনের কাজ বলেই মনে হয়। জেনে-শুনেই তারা সেই সব বাড়িতে ডাকাতি করছেন যেখানে লোক নেই। অনেক সময়ে ফাঁকা জানালা দিয়ে ঘুমপাড়ানি স্প্রে করে সাফ করে দিচ্ছে গোটা বাড়ি।’’
কেশবনগরের এক গৃহকর্ত্রী সোনার গয়না পরে পাড়ার একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। ওই রাতেই বাড়িতে দুষ্কৃতীরা হানা দেয়। কিন্তু বাড়ির লোকজন জেগেছিলেন বলে সে যাত্রায় রক্ষে পায় ওই পরিবার।
স্থানীয় রাতুল দাস জানান, বাড়ির তালা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখেন বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী আলমারি ভেঙে হাত সাফাই করতে ব্যস্ত। গৃহকর্তাদের দেখে জানালা টপকে পালায়। ছবিটা সর্বত্রই এক। কিন্তু পুলিশের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের জন্যই তাদের দৌরাত্ম্য কমছে না। স্থানীয়েরা তাই নিজেরাই রাতপ্রহরা শুরু করতে চলেছেন।
তাঁরা বলছেন, ‘‘উর্দিধারীদের উপরে আর আমাদের ভরসা নেই। নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে। এটা আমরা ভালই বুঝে গিয়েছি।’’