অঙ্কন: মণীশ মৈত্র।
চুলে হাওয়া লাগলেই নাকি মাথা খুলে যায়?
কৃষ্ণনগরের মৃণালকান্তি বিশ্বাস বলছেন, ‘‘নিশ্চয়। তবে রাস্তায় যদি পুলিশ না থাকে!’’
আর পুলিশ থাকলে? হাসতে হাসতে ওই যুবক বলছেন, ‘‘বাইক ছেড়ে সোজা বাসে বাড়ি ফিরতে হয়!’’
বৃহস্পতিবার জেলা জুড়ে পথ নিরাপত্তা নিয়ে লোকজনকে সচেতন করতে পথে নামে পুলিশ। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে বাহাদুরপুরের কাছে বিষ্ণুনগরেও দাঁড়িয়েছিলেন ধুবুলিয়ার ওসি সৌরভ চট্টোপাধ্যায়-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। হেলমেটহীন মোটরবাইক চালক ও আরোহী দেখলেই এ দিন অভিনব পদক্ষেপ করেছেন তাঁরা।
যাঁর মাথায় হেলমেট নেই, তাঁকে বাইক ছেড়ে বাসে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। অথবা বাড়ি থেকে হেলমেট আনিয়ে তবে বাইকে উঠতে হয়েছে। এ দিন মৃণালকান্তি তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে ধুবুলিয়া থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। বন্ধুর মাথায় হেলমেট। তাঁর নেই। ব্যস! কৃষ্ণনগরগামী একটি বাস থামিয়ে বিনীত ভাবে এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘মাথায় তো হেলমেট নেই। যে কোনও সময় অঘটন ঘটতে পারে। আপনি বরং বাসে যান।’’
ততক্ষণে বাসের অন্য যাত্রীরা জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখছেন, হেলমেট না পরার শাস্তি বাস-যাত্রা। ব্যাজার মুখে বাসে উঠে মৃণালকান্তি বলছেন, ‘‘খুব শিক্ষা হয়েছে। হেলমেট ছাড়া আর বাইকে উঠছি না।’’
বাইক থামিয়ে জরিমানা, আইনি ব্যবস্থা অনেক হয়েছে। বসন্তের হাওয়ায় দুলছে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ লেখা ফ্যাকাসে ফেস্টুন। দুর্ঘটনার খতিয়ান দিয়ে পুলিশকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের বোঝাচ্ছেন, হেলমেট পরা কত জরুরি। হাতে গোলাপ তুলে দিয়ে হেলমেট পরার অনুরোধ জানিয়ে গাঁধীগিরিও ঢের হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও হেলমেট ছাড়াই উড়ছে বাইক।
যা দেখে হতাশ এক পুলিশকর্মী এ দিন তো বলেই ফেললেন, ‘‘এখন দেখছি নতুন একটা স্লোগান বাঁধতে হবে— মাথা আপনার, মাথাব্যথা পুলিশের! লোকজন নিজের ভালটা কবে বুঝবে বলুন তো?’’
নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলছেন, ‘‘হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো যাবে না। এই হচ্ছে মোদ্দা কথা। তার জন্য সচেতনতা-সহ সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ শনিবার থেকে পথে নামছে ডোমকলের পুলিশও। হেলমেট ছাড়া বাইক চালাতে দেখলেই গাড়ি আটকানো হবে। বাড়ি থেকে হেলমেট নিয়ে এসে বাইক নিতে হবে। নইলে বাসে গন্তব্যে পৌঁছতে হবে। ডোমকলের এসডিপিও মাকসুদ হাসান বলছেন, ‘‘তখন কিন্তু পথে হল দেরি বলে পুলিশকে দোষ দিলে চলবে না!’’