প্রচারে: কল্যাণীতে। নিজস্ব চিত্র
ভরদুপুরে দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ। হাতের কাজ ফেলে তড়িঘড়ি দোর খুলতেই চমকে ওঠেন মাঝবয়সী এক মহিলা। তাঁর বাড়িতে পুলিশ কেন?
সোমবার হরিণঘাটার গাঙ্গুরিয়ায় ওই মহিলার চোখমুখ দেখে আশ্বস্ত করেন পুলিশকর্মীরাই, ‘‘দিদি, ভয়ের কিছু নেই। আমরা আপনার কাছে কয়েকটি বিষয় একটু জানতে চাইব।’’
—‘বাড়িতে কেউ মোটরবাইক চালান?’
—‘আজ্ঞে, স্বামী ও ছেলে দু’জনেই।’
—‘তাঁরা কি হেলমেট পরেন?’
—‘না, মানে, হেলমেট তো কেউ পরে না।’
বৌমার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ান ওই মহিলার শাশুড়ি। এ বারে দু’জনকে সামনে পেয়ে এক পুলিশকর্মী তাঁদের বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার কথা শোনান। খুঁটিয়ে তাঁদের জানান, হেলমেট মাথায় ছিল বলে কারা বেঁচে গিয়েছেন। যাঁরা হেলমেট পরেননি, তাঁরা কী ভাবে মারা গিয়েছেন। আসলে হেলমেট শুধু একটা মাথাকে নয়, সুরক্ষিত রাখে আস্ত একটা পরিবারকে।
শাশুড়ি-বৌমা দু’জনেই পুলিশকে কথা দিয়েছেন, ‘‘আর নয়, হেলমেট ছাড়া ওদের আর কিছুতেই মোটরবাইকে উঠতে দেব না।’’ হরিণঘাটার আইসি সুজিত ভট্টাচার্য, কল্যাণীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্বাতী ভাংনানি, এসডিপিও উত্তম ঘোষ-সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা হাসি মুখে সেখান থেকে বেরিয়ে অন্য বাড়ির কড়া নাড়েন।
‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ স্লোগান উঠছে সেই কবে থেকে। দুর্গাপুজোর আগে পথ নিরাপত্তা নিয়ে কলকাতার নজরুল মঞ্চে বৈঠকও করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বৈঠকের পরে পরেই ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’-এর কথা ঘোষণা করা হয়। পুলিশের দাবি, তারপর প্রচার, কড়া নজরদারি, গাঁধীগিরি, জরিমানা—মাথায় হেলমেট পরাতে চেষ্টার খামতি নেই।
কিন্তু তারপরেও বাইক-যাত্রায় যে আমূল বদল আসেনি, সে কথা ঠারেঠোরে কবুল করছে জেলা পুলিশেরই একাংশ। আর সেই কারণেই এ বার বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুর্ঘটনার কাহিনি শুনিয়ে হেলমেট পরার অভ্যাস তৈরি করতে চাইছে পুলিশ। আইসি সুজিত ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘দারুন সাড়া মিলছে। গোটা এলাকা জুড়েই প্রচার চালানো হবে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বাদকুল্লা ও রানাঘাটে বাইক দুর্ঘটনায় ৬ জন মারা গিয়েছে। মুর্শিদাবাদের সুতি ও সমশেরগঞ্জ ও বহরমপুরে গত কয়েক দিনের মধ্যে প্রায় ১০ জন মারা গিয়েছেন। পুলিশের দাবি, মাথায় হেলমেট থাকলে ওঁদের কেউই মারা যেতেন না।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জানান, বহরমপুরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রায় ৮৫টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। হেলমেটহীন অবস্থায় কাউকে বাইক চালাতে দেখলেই সিসিক্যামেরার ফুটেজে গাড়ির নম্বর দেখে চালকের বাড়িতে চিঠি পাঠানো হবে। প্রয়োজনে পুলিশ তাঁর বাড়িতে গিয়ে জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি হেলমেট পরা কেন জরুরি সে কথাও বোঝাবেন।
এখন মাথা বাঁচানোই পুলিশের সবথেকে বড় মাথাব্যথা!
(সহ প্রতিবেদন— শুভাশিস সৈয়দ)