প্রতীকী ছবি।
দেখতে দেখতে পার হয়ে গেল পাঁচ দিন। কিন্তু চিকিৎসকের বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী কার্তিক বিশ্বাসকে খুনের ঘটনায় পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারল না। ফলে গোটা কৃষ্ণনগর জুড়েই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের রাউন্ড সেরে বাড়ি ফেরেন শহরের প্রতিষ্ঠিত মেডিসিনের চিকিৎসক কুমুদরঞ্জন বিশ্বাস। সঙ্গে ছিল তাঁর সর্বক্ষণে সঙ্গী এবং ওষুধের সংস্থার দালাল কার্তিক বিশ্বাস। কুমুদরঞ্জনের সামনেই তাঁকে পরপর চারটে গুলি করে খুন করে চলে যায় আততায়ী। তদন্তে নেমে পুলিশ তাঁর দুই ছেলে ও তিন ওষুধের সংস্থার দালালকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। কিন্তু এত দিনেও তদন্ত বিশেষ কিছু এগোয়নি বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন
তদন্তকারী অফিসারেরাই।
পুলিশ সূত্রের দাবি, ওষুধের দালালি বাবদ হাজার-হাজার টাকার কমিশন নিয়ে প্রতিযোগিতা ছাড়াও তদন্তে উঠে আসছে কুমুদরঞ্জনের পরিবারের অভ্যন্তরে নানা কোন্দলের কথাও। আর সেই কোন্দল থেকে এই খুনের সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। সফল চিকিৎসক কুমুদরঞ্জনের দুই ছেলের কেউই সে ভাবে পড়াশোনায় কৃতী নন। বরং নেশাভাঙ করার কথাও পুলিশ জানতে পেরেছে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ডাক্তারের দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে বাবন বেশি বেপরোয়া। নেশা করা ছাড়াও বাবার টাকা নয়ছয় করার বদনামও আছে তাঁর। সম্প্রতি তিনি বাবার কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে বাস কিনে চালাতে যান এবং তাতে ভরাডুবি হয়। এক প্রকার জোর করে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে ভুসি মালের ব্যবসা করতে গিয়েও প্রায় পুরোটাই জলে দিয়েছেন। এর পরে আর ছোট ছেলেকে কোনও টাকা দিতে রাজি ছিলেন না কুমুদরঞ্জন। তা নিয়ে বাবা ও ছেলের মধ্যে মনোমালিন্য হচ্ছিল।
কার্তিক কুমুদরঞ্জনের বিশ্বস্ত লোক, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সম্পত্তির হিসাব অনেকটা ছিল তাঁর নখদর্পণে। তাই কার্তিকের উপরে তার যাবতীয় টাকা পয়সা, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দেখাশুনো করত। তাই কার্তিকের উপরে বাবনের রাগের কারণও খুঁজে পাচ্ছে পুলিশ। বাবন যে তাঁর উপরে অসন্তুষ্ট, তা বাড়িতেও জানিয়েছিলেন কার্তিক। কিন্তু বাবনকে টানা জেরা করেও বেশি দূর এগোতে পারেননি তদনম্তকারীরা। জেলার পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, শুধু বাবন নয়, বাকি কার কী ভূমিকা ছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরায় হেলমেট পরা যে খুনিকে কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র গুঁজতে-গুঁজতে চলে যেতে দেখা গিয়েছিল তাকে ধরতে আর কত সময় লাগবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন কৃষ্ণনগরে।