আকাশে মেঘ দেখলে ভোটের মুখে নেতা-নেত্রী, বিশেষ করে প্রার্থীদের ঘরে বসে থাকার জো ছিল না। ঘন দুর্যোগেও কার ঘরের চালা ভেঙেছে, কার মাটির ঘর ধসে পড়েছে, সে সব খোঁজ নিতেন ওঁরা।
রাতবিরেতে হাসপাতাল ছুটতে হবে? ভোটের মুখে এ সব নিয়ে ভাবতে হতো না ভোটারদের। নানা দলের একাধিক লোকজন মুখিয়ে থাকতেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। ‘আমি তোমাদের লোক’ প্রমাণ করতে ও পাশে দাঁড়ানোর সে কী হিড়িক!
এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে সেই চেনা ছবিটা বেশ বদলে গিয়েছে। ভোটের আগেই পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছে বিভিন্ন প্রার্থী। অভিযোগ, এখন হাজারও ঝড়-বৃষ্টিতে আর কেউ সে ভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছেন না।
বহরমপুর এলাকার বিদায়ী তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত প্রধান বলছেন, ‘‘১৬টি আসনের মধ্যে বেশিরভাগ আসনে বিরোধীরা মনোয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত দখল করেছি আমরা। ভোট চাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে আমরা যে পাশে থাকছি না, এমন অভিযোগ ঠিক নয়।’’
তৃণমূলের দখলে থাকা ভগবানগোলা পঞ্চায়েতের ২০টি আসনেই বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ায় নিশ্চিন্তে নেই বিদায়ী পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের শিরিন আখতার। তিনি বলছেন, ‘‘আমার অবস্থা অন্যদের মতো নয়। এলাকায় নানা সমস্যা রয়েছে। ফলে সে সব সমাধানের জন্য সর্বদা ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।’’
এ দিকে এ বার পঞ্চায়েত ভোটের মুখে হাসপাতালে রাজনৈতিক দলের দাপাদাপি অনেকটাই কম বলে জানা গিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘গত বিধানসভা ভোটের সময়েও এক জন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন। দেখে বোঝার উপায় থাকত না, রোগী কোন দলের! কেউ বলতেন— ‘স্যালাইন দিন, ইঞ্জেকশন দিন।’ অন্য রাজনৈতিক দলের কেউ বলতেন, ‘রোগীর জটিল অসুখ, রেফার করে দিন।’ এ বার কিন্তু সেই হিড়িক অনেক কম।’’ ভগবানগোলা-১ ব্লকের কানাপুকুর গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ সুজন গায়েন বলেন, ‘‘সারা বছর রোগী নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন আসেন। তবে ভোটের মুখে সেই সংখ্যা বেড়ে যায়। এ বার কিন্তু সেই প্রবণতা অনেকটাই কম।’’