লক্ষ টাকায় নিকাশি গড়েও জলে ডুবল শহর

লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বানানো হয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় নর্দমা। বসানো হয়েছে শক্তিশালী কয়েকটি পাম্পও। হিসেব বলছে তাতে শহর জলমগ্ন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সব হিসেব উল্টে ফি বছর বর্ষায় শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। গৃহবন্দি হয়ে থাকতে বাধ্য হন মানুষ। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ কৃষ্ণনাগরিকেরা। সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে শহরের হাইস্ট্রিট, তালপুকুর রোড, কাঠালপোঁতা, পল্লিশ্রী, নগেন্দ্রনগর, রাধানগর, ঘূর্ণি, শক্তিনগরের বেশ কিছু এলাকা দিনের পর দিন জলমগ্ন হয়ে পড়ে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩৮
Share:

জলে ডুবেছে কৃষ্ণনগরের নাজিরাপাড়া। —ফাইল চিত্র

লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বানানো হয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় নর্দমা। বসানো হয়েছে শক্তিশালী কয়েকটি পাম্পও। হিসেব বলছে তাতে শহর জলমগ্ন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সব হিসেব উল্টে ফি বছর বর্ষায় শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। গৃহবন্দি হয়ে থাকতে বাধ্য হন মানুষ। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ কৃষ্ণনাগরিকেরা।
সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে শহরের হাইস্ট্রিট, তালপুকুর রোড, কাঠালপোঁতা, পল্লিশ্রী, নগেন্দ্রনগর, রাধানগর, ঘূর্ণি, শক্তিনগরের বেশ কিছু এলাকা দিনের পর দিন জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তখনই প্রশ্ন ওঠে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে নিকাশিনালা গড়া নিয়ে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এত টাকা খরচ করে একাধিক নর্দমা তৈরি করা বা বেশ কিছু শক্তিশালী পাম্প বসানোর পরও কেন দ্রুত জমা জল শহর থেকে বের করে দেওয়া যাচ্ছে না?
প্রাচীন এই শহরে সেই অর্থে কোনও পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তার উপরে গোটা শহরটাই প্রায় ‘বেসিনের’ মতো। বেশ কিছু এলাকা একেবারেই নিচু। ফলে প্রথম থেকেই এই শহরের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে একটা সমস্যা ছিলই। কিন্তু সমস্যার সমাধানে শহরের বুকে বিভিন্ন সময় নর্দমা তৈরি হয়েছে। কখনও বা স্থানীয় সাংসদদের টাকায় আবার কখনও বা রাজ্য সরকারের টাকায়। পুরসভা নিজেও লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সেই সব নর্দমা তৈরি করেছে। বসিয়েছে বেশ কিছু স্থায়ী উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পও।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির সাংসদ সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের ১২ লক্ষ ও পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে করে চাষাপাড়া এলাকায় একটি হাইড্রেন ও নগেন্দ্রনগরে ২০ লক্ষ টাকায় তৈরি হয়েছে হাইড্রেন তৈরি করা হয়েছে। বসানো হয়েছে বেশ কয়েকটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পও। তালপুকুর রোড এলাকায় বসানো হয়েছে দু’টো পাম্প। পুরসভার ১১ লক্ষ টাকায় তৈরি হয়েছে দুটো নর্দমা। শক্তিনগর অঞ্জনাপাড়ার বটতলা এলাকায় পুরসভার সাড়ে ন’লক্ষ টাকায় নর্দমা তৈরির পাশাপাশি যতীন মুখোপাধ্যায় রোডে পুরসভা ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে করে নর্দমা তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়াও তাপস পালের সাংসদ তহবিল ১৬ লক্ষ টাকায় কবিগুরু রোড ও ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শম্ভু ভট্টাচার্য রোডে নর্দমা তৈরি করা হয়েছে।

Advertisement

আবার তাপস পালের সাংসদ তহবিল থেকে কাঁঠালপোতায় হাইড্রেন ও একাধিক পাম্প বসানো হয়েছে। হাপসিপাড়া, নাজিরাপোতা রেলগেট কলোনি, বাগানেপাড়া, কানাইপল্লী এলাকায় পুরসভার প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকায় নর্দমা তৈরি করা হয়েছে। বসানো হয়েছে একটি পাম্পও। পল্লিশ্রী ও বউবাজার বক্সি লেন এলাকায় ২০১১ সালে তাপস পালের সাংসদ তহবিল ১৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি হাইড্রেন তৈরি করা হয়েছে। বসানো হয়েছে পাম্পও। এর বাইরেও ঘূর্ণির রক্ষিতবাড়ি এলাকায় রাজ্য সরকারের দেওয়া ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে করে ড্রেন তৈরির পাশাপাশি রথতলা-রাজারোড এলাকায় রাজ্য সরকারের ৪২ লক্ষ টাকা ব্যায়ে হাইড্রেন তৈরি হয়েছে। এন ঠাকুর রোডে চৌরাস্থা থেকে এভি স্কুল পর্যন্ত ২৫ লক্ষ টাকা ব্যায়ে তৈরি হয়েছে নর্দমা। সব মিলিয়ে পুর এলাকার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে বলে পুরকর্তাদের দাবি।

কিন্তু তারপরেও কেন জল জমে থাকছে? পুরসভার দাবি, আসলে এই সব এলাকা নিচু হওয়ার পাশাপাশি এত দিন তেমন কোনও নিকাশি ব্যবস্থা না থাকার কারণে আগে দিনের পর দিন জল জমে থাকত। মানুষ জলবন্দি হয়ে থাকত। এখন হয়ত সে দিন নেই। তবে ভারি বৃষ্টির পরে আগে যেখানে দিনের পর দিন জল জমে থাকত এখন সেখানে খুব বেশি হলে দুই থেকে তিন দিন জলছে। দু’একটি জায়গায় এর ব্যতিক্রম এখনও থাকলেও সেই সব এলাকার জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনাও করা হচ্ছে বলে পুরসভার দাবি। পুরপ্রধান অসীম সাহা বলেন, ‘‘আসলে শহরটাই নিচু। বেসিনের মতো। তার উপরে শহরের বুক দিয়ে চলে যাওয়া অঞ্জনা নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। অথচ এই অঞ্জনাই শহরের নিকাশির অন্যতম স্তম্ভ।’’ ‘‘তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শহরের যে প্রাকৃতিক নিকাশি ব্যবস্থা ছিল তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’—মত তাঁর।

Advertisement

যদিও সে কথা শুনতে রাজি নয় বিরোধীরা। গত বিধানসভা নির্বাচনে ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অসীম সাহা। তিনি বলেন, ‘‘নিকাশি নিয়ে কোনও বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা না থাকায় এই অবস্থা। পুরসভা টাকা খরচ করেছে কিন্তু তা অপরিকল্পিত ভাবে। তাই মানুষের কোনও কাজে আসছে না। পুরো টাকাটাই জলে গিয়েছে।’’

তবে সার্বিক যে পরিকল্পনা নেই সে কথা স্বীকার করে নিয়োছেন পুরপ্রধান। তিনি বলেন,‘‘শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে গেলে যে টাকার প্রয়োজন তা পুরসভার নেই। আমরা বিচ্ছিন্ন ভাবে যখন যেমন টাকা পেয়েছি তেমন ভাবেই কাজ করেছি।’’ তিনি আরও বলেন,‘‘তবে আমরা একটি সংস্থাকে দিয়ে সার্ভে করাচ্ছি। তারা শহরের ভূমির উচ্চতা অনুযায়ী নিকাশি ব্যবস্তার একটি প্রজেক্ট তৈরি করে দেবে। সেই রিপোর্ট কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারে কাছে পাঠাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন