বন্যার সময় এ জায়গা চলে যায় নদীর গর্ভে। তাই বালির বাঁধ। — নিজস্ব চিত্র
চরমাজদিয়া পশ্চিমপাড়ার প্রধান সমস্যা পানীয় জলের অভাব। বাসিন্দাদের প্রতিদিন খাবার জলের ভরসা করতে হয় টাইম কলের উপর। আর তার জন্য যেতে হয় পাশের পাড়ায়। সেখানেও মাত্র দু’টি কল। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে তবে মেলে এক বালতি জল। পানীয় জলের সমস্যা কবে মিটবে?
তরুণ দেবনাথ, ১৮৭ নং বুথ
ওই বুথে দু’টো টাইম কলের পাশাপাশি চারটে গভীর নলকূপও আছে। পঞ্চায়েত চাইছে আরও নলকূপ বসাতে। কিন্তু সমস্যা জায়গা নিয়ে। চরমাজদিয়া চরব্রহ্মনগরে এখন জায়গার এত দাম যে সামান্য নলকূপ বসানোর মতো জায়গাও কেউ দিতে রাজি নয়। ফলে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে খুব তাড়াতাড়ি আমরা বাড়ি বাড়ি পানীয় জল দেওয়ার জন্য সার্ভের কাজ শুরু করব।
চরমাজদিয়া দক্ষিণপাড়ায় অনেক দিন আগে রাস্তা হয়েছে। এর মধ্যে বসতি বেড়েছে, বেড়েছে লোকসংখ্যা। নতুন রাস্তা হয়নি। পুরানো রাস্তাগুলোর অবস্থাও বেশ খারাপ। সব মিলিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা। বর্ষায় মানুষ দুর্ভোগে পড়বেন।
শান্তিরঞ্জন দেবনাথ, ১৯০ নং বুথ
এ পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ রাস্তা ঢালাই। কিন্তু সমস্যা তৈরি হচ্ছে রাস্তার পাশের বাড়িগুলোর জন্য। বেশিরভাগ বাড়িই রাস্তা থেকে উঁচু করা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই সীমানা পাঁচিল দেওয়া হয়নি। ফলে বাড়ি থেকে নিয়মিত নোংরা জল রাস্তায় পড়ছে। ফলে রাস্তা খারাপ হচ্ছে দ্রুত। স্থানীয় মানুষকে সচেতন হতে হবে।
এই পঞ্চায়েতের গৌরনগর, ঘোলাপাড়া প্রভৃতি এলাকায় রাস্তা বরাবর কোনও নিকাশি নালা নেই। অথচ রাস্তাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই পঞ্চায়েতের সঙ্গে গৌরাঙ্গ সেতু বরাবর কৃষ্ণনগর-বর্ধমান রাজ্য সড়কের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ওই রাস্তা। নিকাশি নালার ব্যবস্থা করলে কমপক্ষে সাড়ে তিনশো পরিবার উপকৃত হবে।
সুফল বৈরাগ্য, ১৯২ নং বুথ
এটা সত্যি যে রাস্তাটি পঞ্চায়েতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের পথ। প্রায় চার কিলোমিটার লম্বা ওই রাস্তা বরাবর নিকাশি নালা তৈরি করতে অনেক টাকার দরকার। এ জন্য আমরা পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের কাছে আবেদন জানিয়েছি।
এ এলাকায় প্রধান নিকাশি নালা থাকলেও, তার সংস্কার করা খুব দরকার। আবর্জনা, বন্যার পলি জমে জায়গায় জায়গায় বুঁজে গিয়েছে ওই নর্দমা। যার ফলে বর্ষায় একটু বেশি বৃষ্টি হলেই বাড়িতে জল ঢুকে যায়। কোনও কোনও জায়গায় প্রায় গোটা বর্ষাকাল জুড়ে জল জমে থাকে। পোকামাকড়, মশার উপদ্রব বাড়ে।
অনুপ দেবনাথ, বুথ নং ১৮৭
পঞ্চায়েত নজর দিচ্ছে ও দেবেও। কিন্তু পাশাপাশি যারা ওই নালা ব্যবহার করেন, তাদেরও দায়িত্ব কিছু আছে। বিরাট ওই নিকাশি নালা তৈরি হয়েছিল সাত বছর আগে। যাঁরা ওই নালা ব্যবহার করেন, তাঁরা যাবতীয় আবর্জনা ওই নালাতেই ফেলেন। প্লাস্টিক থেকে শুরু করে বাড়ির সব রকমের জঞ্জাল। ফলে ওই নিকাশি নালার মুখ বুঁজে গিয়ে এই সমস্যা তৈরি হয়। প্রতি বছর দু’বার করে ওই নর্দমা পরিষ্কার করানো হয়। ষাট হাজার টাকা করে খরচ হয় প্রতিবার।
আমাদের পঞ্চায়েতে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই তাঁতশ্রমিক। কিন্তু তাঁতশিল্পের যা হাল তাতে অনেকেই এখন কর্মহীন। চূড়ান্ত দুরাবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বয়স্ক তাঁত শ্রমিকেরা। অনেকে বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। অথচ এঁরা কেউ বার্ধক্য ভাতা পান না। কেন?
মৃনাল দেবনাথ, বুথ নং ১৮৫
২০০৫ সালে যখন প্রথম বিপিএল তালিকা প্রকাশ হয়, তখন আমাদের চরমাজদিয়া চরব্রহ্মনগর পঞ্চায়েতের মোট ১৩টি বুথের মধ্যে মাত্র দু’টি বুথের বাসিন্দাদের নাম বিপিএল তালিকায় ছিল। তার পর ২০০৯-এ সংশোধিত তালিকা প্রকাশ পায়। তাতেও খুব একটা উনিশ-বিশ হয়নি। এখন মাত্র ১৭০ জন এই অঞ্চলে বার্ধক্য ভাতা পান। যদিও দাবিদার আরও অন্তত হাজার খানেক মানুষ। আমরা নতুন করে তালিকা পাঠিয়েছি।
নদীর ভাঙন অন্যতম বড় সমস্যা। সম্প্রতি সেচ দফতরের উদ্যোগে গঙ্গার পাড় বাঁধানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেচ দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাড় বাঁধানোর সময় স্থানীয় মানুষের ব্যবহারের জন্য চারটি ঘাট তৈরি করে দেবেন। কিন্তু সব মিলিয়ে আমাদের পঞ্চায়েতে ন’টি ঘাট ব্যবহার করেন মানুষ।
তাতেও দোল বা রাসের মতো উৎসবের সময় চরম ভিড় হয়। বাকি ঘাটগুলি কেন সেচ দফতর বাঁধিয়ে দেবে না? পঞ্চায়েত এ ব্যাপারে কি উদ্যোগ নিচ্ছে?
শিবশঙ্কর দেবনাথ, বুথ নং ১৮৩
পঞ্চায়তের তরফে আমরাও সেচ দফতরের কাছে ন’টি ঘাটেই সিঁড়ি বাঁধানোর জন্য বলেছি। আশা করছি ওরা মেনে নেবেন।
রাস, দোল, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমীর মতো উৎসবে মায়াপুর ও নবদ্বীপ যাওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ যে ঘাট ব্যবহার করেন, সেটি আমাদের পঞ্চায়েতে। কিন্তু
ঘাটে একটি মাত্র জেটি থাকায় পর্যটকদের অসুবিধায় পড়তে হয়। আর একটি জেটির জন্য পঞ্চায়েত কি ব্যবস্থা নিচ্ছে?
খুকুমণি দেবনাথ, বুথ নং ১৮৭
কথা হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় জেটির ব্যবস্থা খুব তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে।
পশ্চিম দিকে গঙ্গার পাড় বাঁধানোর কাজ শুরু হয়েছে ঠিকই। কিন্তু যে ভাবে কাজ হচ্ছে, তাতে ভাঙন রোধে আসল কাজ কতটুকু হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বাঁধানো হচ্ছে ৮০০ মিটার নদীর পাড়। কিন্ত তার পরেও গৌরাঙ্গ সেতুর তলা পর্যন্ত কম করে দেড় কিমি নদী পাড় বাঁধানো বাকি থাকছে। সব চেয়ে বড় কথা, এই না বাঁধানো পাড়ের মধ্যেই রয়েছে ভাঙন-প্রবণ এলাকা।
গৌতম দেবনাথ, বুথ নং ১৮৩
পঞ্চায়তের তরফেও একই বিষয়ে জেলা পরিষদ এবং সেচ দফতরের কাছে জানানো হয়েছে।
আমাদের এলাকার শিশু শিক্ষা নিকেতন স্কুলে চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ না থাকায় পড়ুয়াদের মাটিতে বসে লেখাপড়া করতে হয়। শীত আর বর্ষায় খুব কষ্ট হয়।
সুজিত দেবনাথ, বুথ নং ১৮৯
স্কুল কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছেন। পঞ্চায়েত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চলতি বছরেই চেয়ার-বেঞ্চ তৈরি করে দেওয়া হবে।
উত্তর ও দক্ষিণ কলাতলা এলাকার প্রায় আড়াইশো পরিবার খাওয়ার জল নিতে আসেন আধ কিলোমিটার দূরের গৌরনগরের মোড়ে একটি গভীর নলকূপে।
গ্রামের ভিতরে পানীয় জলের ব্যবস্থা কবে হবে?
রতন রাহা, বুথ নং ১৯১
ওই এলাকায় ইতিমধ্যেই আঠারো পাইপের গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। তা ছাড়া তৈরি হয়েছে ‘ফ্লাড সেণ্টার’। সেখানেও বিশুদ্ধ জলের ব্যবস্থা রয়েছে। আর্সেনিক মুক্ত জলেরও ব্যবস্থা আছে। আসলে গৌরনগরের জল খুব ভাল, এমন একটা কথা চালু আছে। তাই লোকে স্বেচ্ছায় ওখানে জল নিতে যান।
এই পঞ্চায়েতের মানুষের ভরসা কয়েক কিলোমিটার দূরের মহেশগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতাল। অথচ সেখানে চিকিৎসা বলতে কিছুই মেলে না। সামান্য জ্বর, সর্দিকাশি বা পেটখারাপ ছাড়া অন্য যে কোনও অসুখে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় অন্যত্র। প্রসূতি থেকে প্রবীণ, সকলকেই হয় নবদ্বীপ, নয় কৃষ্ণনগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই দূরাবস্থা কবে দূর হবে?
দীপু দাস, বুথ নং ১৮৪
এই সমস্যার কথা স্বাস্থ্যদফতরে জানানো হয়েছে। ওরা আশ্বাস দিয়েছে, দ্রুত অবস্থার পরিবর্তন হবে।