শিয়রে টেট, কোমর বাঁধছে প্রশাসন

পরীক্ষা কী শুধু পরীক্ষার্থীর? টেট নিয়ে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের তোড়জোড় বলছে পরীক্ষা দুই জেলার প্রশাসনেরও। যানজটের জেরে গত বছর প্রাথমিকের টেট পরীক্ষা দিতে পারেননি কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের কর্তারা বৈঠক ডেকে তার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। শনিবারের টেট নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকের মূল বিষয় ছিল যানজট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০১:২৫
Share:

টেট-এর দিনে এই যানজট মোকাবিলা করাই চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

পরীক্ষা কী শুধু পরীক্ষার্থীর? টেট নিয়ে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের তোড়জোড় বলছে পরীক্ষা দুই জেলার প্রশাসনেরও।
যানজটের জেরে গত বছর প্রাথমিকের টেট পরীক্ষা দিতে পারেননি কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের কর্তারা বৈঠক ডেকে তার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। শনিবারের টেট নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকের মূল বিষয় ছিল যানজট। সেখানে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা ছাড়াও ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের অফিসাররা। স্বরাষ্ট্রসচিব ও শিক্ষামন্ত্রী মুর্শিদাবাদ জেলাশাসকের সঙ্গে বিডিও কনফারেন্সও হয়। সোমবার পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্তদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ কর্তৃপক্ষ। আগেভাগেই কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে নদিয়া জেলা প্রশাসনও।
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও জানান, টেট পরীক্ষার দিনে যানজট সামাল দিতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ফরাক্কা, মোড়গ্রাম, কুলি, করিমপুরে ভারী পণ্যবাহী লরি বিশেষ করে বালি ও পাথর বোঝাই লরিগুলিকে সকাল পাঁচটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কোনও ফাঁকা জায়গায দাঁড় করিয়ে রাখা হবে। এ ছাড়াও ভাগীরথী সেতুর দুই পাড়ে ব্রেকভ্যান রাখা থাকবে বলেও ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাতে কোনও যান আচমকা বিকল হয়ে পড়লে যানজট শুরু হওয়ার আগেই দ্রুত সেতুর উপর থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
আগামী ৩০ অগস্ট প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মুর্শিদাবাদে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪৫০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য ২৯৮টি পরীক্ষা কেন্দ্র বেছে নেওয়া হয়েছে। বহরমপুর মহকুমা এলাকায় ৮০টি, ডোমকলে ৪১টি, জঙ্গিপুরে ৬৭টি, কান্দিতে ৫৭ ও লালবাগ মহকুমা এলাকায় ৫৩টি পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। বৈঠকে যানজট সামাল দিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ পরীক্ষার্থীর পাশাপাশি প্রশ্ন ও উত্তরপত্র নিরাপদে পরীক্ষাকেন্দ্র পৌঁছে দেওয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বেহাল দশা প্রশাসনিক কর্তাদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সংযোগকারী বহরমপুর লাগোয়া ভাগীরথীর উপরে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতুতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট যা নিত্যদিনের ঘটনা। যানজট সামাল দিয়ে পরীক্ষার্থীদের নিরাপদে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া প্রশাসনের কাছে চ্যালেঞ্জ।

Advertisement

জেলাশাসক জানান, মুর্শিদাবাদের পরীক্ষা কেন্দ্রগুলি সরজমিনে তদন্ত করে যদি কোনও সমস্যা থাকে, তা হলে আগামী ২৬ অগস্টের মধ্যে সমাধান করার কথা বলা হয়েছে। টেট পরীক্ষা নির্বিঘ্নে করতে বিডিও, এসডিও এবং এডিএমদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সমস্ত এসডিও এবং বিডিওদের ২৯ অগস্ট থেকেই কন্ট্রোল রুম খোলার কথা বলা হয়েছে। টেট-এর নোডাল অফিসার হিসেবে যে সমস্ত এডিএমদের দায়িত্ব রয়েছে, তাঁরা ২৯ অগস্ট থেকেই সংশ্লিষ্ট মহকুমার কার্যালয়ে থাকবেন। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি দেবাশিস বৈশ্য বলেন, ‘‘পরীক্ষার্থীদের সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে সাধারণ মানুষের সাহায্যও জরুরি।’’

সম্প্রতিক বৃষ্টিতে নবগ্রাম ব্লক জলমগ্ন হয়েছিল। নবগ্রামের দফরপুর রজতকাঞ্চন হাইস্কুলে বন্যার জল এখনও রয়ে গিয়েছে। ওই কেন্দ্রে ৭০০ জনের পরীক্ষা রয়েছে। ওই স্কুলের পরিবর্তিত পরীক্ষাকেন্দ্র হল নেহরুনগর আদিবাসী হাইস্কুল ও পণ্ডিত রঘুনাথ মূর্মূ টিচার্স ট্রেনিং স্কুল। পরীক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারে, সে ব্যাপারে বাস মালিক সংগঠনের সঙ্গেও বিস্তারিত আলোচনার ভার দেওযা হয়েছে আরটিও এহেসান আলিকে। আজ, মঙ্গলবার বাস ও ট্রেকার মালিকদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে।

Advertisement

একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে নদিয়া জেলা প্রশাসনও। ৩০ অগস্ট জেলার ২৪২টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বার জেলার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬শো ৬৬ জন। জেলার ১৯টি জায়গায় প্রশ্নপত্র রাখা হবে। সোমবার থেকেই প্রশ্নপত্র ঢুকতে শুরু করেছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। আজ, মঙ্গলবার বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে প্রশাসন। পরীক্ষার দিন জেলার প্রতিটি রুটে বেলা দশটা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত ও বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। জেলার ছোট গাড়িগুলি যাতে অতিরিক্ত টাকা না নিতে পারে সে দিকেও নজর রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে। কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তায় বিশেষ ট্রাফিকের ব্যবস্থা থাকবে।

কিছু স্পর্শকাতর কেন্দ্রকে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। সেই সব কেন্দ্রগুলিতে আলাদা করে নজরদারি চালানো হবে। প্রয়োজনে ভিডিওগ্রাফি করা হবে। বিভিন্ন স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নজরদারি চালানো হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জা‌নানো হয়েছে। নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির পক্ষে অসীম দত্ত বলেন, ‘‘গতবারের টেট পরীক্ষার মতো এ বারও প্রতিটি রুটে অতিরিক্ত বাস নামানো হবে।’’ ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

সক্রিয় হচ্ছে পুরসভাগুলিও। যানজট এড়াতে শহরের প্রতিটি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি পুরভার কর্মীরা থাকবেন। পরীক্ষাকেন্দ্র চেনানোর জন্যে থাকবেন পুরসভার ভলেন্টিয়াররা। সতর্ক করা হয়েছে দমকল বাহিনীকে। দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত জেলার সমস্ত জেরক্স মেশিন বন্ধ থাকবে। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রের দু’শো মিটার জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হবে। প্রত্যেককে অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র ঢুকতে হবে। পরীক্ষা শুরুর আধ ঘণ্টা আগে তাঁরা পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন। ক্যালকুলেটার বা মোবাইল ফোন নিয়ে ঢোকা যাবে না। পরীক্ষা চলাকালীন কোনও পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বের হতে পারবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন