হোমের উঠোনেই এল রুবির ব্লেজার পরা বর

পাত্র, বনগাঁর চুঁয়াটিয়া গ্রামের সুব্রত বর একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। বলছেন, ‘‘বিয়ে করব ভাবিইনি। তবে, যখন ভাবলাম, ঠিক করেছিলাম অনাথ কাউকেই জীবনে আনব।’’

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

রেজিনগর শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩২
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

অন্ধরাতের পল্লি থেকে উদ্ধারের পরে দশটা বছর যে বাড়িতে নতুন করে বাঁচার লড়াই শুরু করেছিল মেয়েটি, বিয়ের জন্য সে বাড়ির লম্বা উঠোনটাই বেছে নিলেন রুবি (নাম পরিবর্তিত)।

Advertisement

রেজিনগরের বেসরকারি হোমের সে বাড়িতে অন্য আবাসিকেরা তাই সোমবার সকাল থেকে বেজায় ব্যস্ত।

উঠোনময় ভিয়েন পড়েছে। সাজানো হয়েছে পাত্রীকে, ব্লেজার পরে পাত্র এল বলে!

Advertisement

তাঁর আসল নাম হারিয়ে গিয়েছে সেই কবে। তা হোক, হোমের দেওয়া নামেই এ দিন সকাল থেকে হই হই, ‘রুবির বিয়ে!’

পাত্র, বনগাঁর চুঁয়াটিয়া গ্রামের সুব্রত বর একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। বলছেন, ‘‘বিয়ে করব ভাবিইনি। তবে, যখন ভাবলাম, ঠিক করেছিলাম অনাথ কাউকেই জীবনে আনব।’’ সে কথা কবুল করার পরে, যে সংস্থার কাজ করেন সুব্রত তারই এক কর্মী বেরিয়ে ছিলেন পাত্রীর খোঁজে। রেজিনগরের হোমে রুবির খোঁজ পাওয়ার পরে চার হাত এক হল সোমবার।

মাথা নিচু করে রুবিও বলছেন, ‘‘অবস্থার ফেরে জীবনটা বড় ঘেঁটে গিয়েছিল। সেই ভাঙা জীবন এ বার নতুন করে গড়তে চলেছি।’’

আর, পাত্রের কাকা বিষ্ণুপদ বলছেন, ছেলে-মেয়ে সুখি হলে তাতে তো আমাদের সুখ। খুব গর্ব হচ্ছে।’’

ওই বেসরকারি হোমের আধিকারিক ফেরদৌসি বেগম ব‌‌লেন, ‘‘দশ-দশটা বছর ধরে মেয়েটাকে দেখেছি, বড় করেছি। নিজের মতো করে মানুষ করেছি। কী খুশি যে লাগছে, বলে বোঝাতে পারব না।’’

বছর খানেক হল, রুবি চাকরি পেয়েছেন কলকাতায়, শিশুসুরক্ষা দফতরে। হোম ছেড়ে যাওয়ার সময়ে সে কী কান্না। বিয়ের আসর কোথায় হবে, এ প্রশ্ন উঠতে তাই এক কথায় তার পুরনো হোমকেই বেছে নিয়েছেন রুবি।

পুলিশ ও রেজিনগরের ওই বেসরকারি হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০০৮ সালে সে পাচার হয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ চেষ্টার পরে স্থানীয় পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মুম্বই থেকে উদ্ধার করে। সেই থেকে তার ঠিকানা ছিল ওই হোম।

২০০৮ থেকে টা‌না দশ বছর রেজিনগরের ওই হোমই ছিল তার ঠিকানা। রুবি বলছেন, ‘‘আমার হারানো বাড়ি হয়ে উঠেছিল বুঝি হোম।’’ সোমবার তাই বিয়েও হল সেই বাড়িতেই।

৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে রেজিনগর মোড়ের বাড়িটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। বাড়ির সামনে জ্বলছে হ্যালোজেন। বসেছে কলাগাছের ছাদনাতলা। পাত্র ও পাত্রীর সুসজ্জিত আসন। বরযাত্রী ও আমন্ত্রিতদের জন্য পাতে পড়েছে— ভাত, ডাল, ভাজা, পাঁচ আনাজের তরকারি, মুরগির মাংস, চাটনি, দই, মিষ্টি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন