কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল

অ্যাম্বুল্যান্স রাজ রুখতে কড়া দাওয়াই

সদ্য হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন প্রসুতিরা। কোলে শিশু। সিজারের ফলে শরীর কাবু। শিশু কোলে ওঁরা চাতক পাখির মতো চেয়ে আসেন নিরখরচার সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের দিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২৩
Share:

সদ্য হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন প্রসুতিরা। কোলে শিশু। সিজারের ফলে শরীর কাবু। শিশু কোলে ওঁরা চাতক পাখির মতো চেয়ে আসেন নিরখরচার সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের দিকে। কিন্তু চালকেরা গোঁ ধরে রয়েছেন, তাঁরা কাজ করবেন না। হাসপাতালের হস্তক্ষেপে চালকেরা কাজ করতে গররাজি। শেষমেশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সমস্যা মেটে। ততক্ষণে অবশ্য কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক ঘণ্টা। অবশেষে প্রসুতিরা হয়রানি কাটল। বাড়ি ফিরলেন তাঁরা। সোমবার সকালে সদর হাসপাতালের এই হয়রানিতে ক্ষুব্ধ রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোকজন।

Advertisement

জটিলতাটা তৈরি হচ্ছিল মাস খানেক আগে থেকেই। সরকার দারিদ্র রেখার নীচে বসবাসকারী প্রসুতিদের জন্য বিনা পয়সার অ্যাম্বুল্যান্সের সংস্থান করেছে। ছুটি পাওয়া প্রসুতিদের ওই অ্যাম্বুল্যান্স নিরখরচায় বাড়ির দরজা অবধি পৌঁছে দেয়। এক্ষেত্রে রোগীর বাড়ির লোকজনকে নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করতে হয়। চালকদের এজেন্সির লোকজন সেই ফোন পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের বন্দোবস্ত করে। এক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও ভূমিকা ছিল। সমস্যাটা হচ্ছিল এখানেই। পর্যাপ্ত নজরদারির না থাকার সুযোগে চালকেরা রোগীদের কাছ থেকে টাকা ‘বকশিস’-এর নামে টাকা আদায় শুরু করে। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অনেকেই নালিশও জানান।

এ দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরনো ব্যবস্থা বদলে অ্যাম্বুল্যান্সের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বিধি চালু করতে চান। এতেই বেঁকে বলে চালকেরা। আর এতে বিপাকে পড়েন রোগীরা। কালীগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম বড়নলদা, পানিনালা, চাপড়ার শ্রীনগরের অনেকে রোগীকেই অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘসময়। শালিকগ্রামের বাসিন্দা বিউটি বিবি কিংবা চাপড়ার শ্রীনগরের পূজা ঘোষ বলেন, “সেই কোন সকালে আমাদের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন ডাক্তারবাবু। তখন থেকে বসে আছি গাছ তলায়। পেটে সেলাই। অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে। কিন্তু কি করব গাড়ি যাবে না বলে দিয়েছে যে।”

Advertisement

চালকদের দাবি, হাসপাতাল থেকে নিয়ন্ত্রণ করার ফলে সকলে সমান সংখ্যক রোগী পাবে না।

বেলার দিকে বিষয়টি নজরে আসতেই গাড়ির মালিকদের ডেকে পাঠান হাসপাতাল সুপার শচীন সরকার। তিনি পরিষ্কার জানান, মালিকেরা যদি দায়িত্ব নেন, তাহলেই তিনি পুরনো ব্যবস্থাতে ফিরে যাবেন। আর এবার যদি কোনও চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তাহলে সেই গাড়ি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করে দেবেন। বাধ্যে হয়েই সেই শর্তে রাজি হয়ে যান মালিকেরা। গাড়ির মালিক অনুপ রায় বলেন, “আমরাও চালকদের পরিষ্কার বলে দিয়েছি, টাকা চাওয়ার অভিযোগ পেলেই কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হবে।’’ আর সুপার বলেন, “কিছু দিন ধরেই অভিযোগ পাচ্ছিলাম। উপর মহলের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা এই কড়া অবস্থান নিয়েছি। কোনও ভাবেই আর এমনটা চলতে দেব না।”

এর আগেও সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের অনিয়ম রুখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর আর যে কে সেই হয়ে গিয়েছে। এ বারের পদক্ষেপ টেঁকসই হয় কিনা, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন