নয়া নির্দেশে নানা মত

মাঠে জোর, প্রশ্নে শিক্ষা

পড়ুয়াদের খেলাধুলার মান বাড়াতে চায় রাজ্যের শিক্ষা দফতর। আর সেই কারণে শারীরশিক্ষার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মূলত ‘স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষার’ কাজে লাগাতে নির্দেশ দিয়েছে। আর শিক্ষা দফতরের এই নির্দেশিকায় সিদুঁরে মেঘ দেখছেন জেলার বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ। 

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১২
Share:

প্রতীকী ছবি।

পড়ুয়াদের খেলাধুলার মান বাড়াতে চায় রাজ্যের শিক্ষা দফতর। আর সেই কারণে শারীরশিক্ষার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মূলত ‘স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষার’ কাজে লাগাতে নির্দেশ দিয়েছে। আর শিক্ষা দফতরের এই নির্দেশিকায় সিদুঁরে মেঘ দেখছেন জেলার বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

তাঁদের দাবি, শারীরশিক্ষার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ‘স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষার’ কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভাল। কিন্তু তার জন্য চায় উপযুক্ত পরিকাঠামো। অন্য বিষয়ের শিক্ষকের পদ শূন্য থাকার ফলে অনেক স্কুলে শারীরশিক্ষার শিক্ষকদের দিয়েই অন্য ক্লাস করানো হয়। এখন এই নির্দেশের ফলে শারীরশিক্ষার শিক্ষকেরা যদি শুধু সেই ক্লাসই করেন তা হলে অন্য বিষয়গুলি কারা পড়াবেন?

যদিও জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস দে বলছেন, ‘‘খেলাধুলার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষা দফতরের এই উদ্যোগ ভাল। ইতিমধ্যে জেলায় অনেক শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। আরও শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। ফলে এই নির্দেশিকার ফলে পড়াশোনার সমস্যা হবে না। বরং লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলাও ভাল হবে।’’

Advertisement

লালগোলার লস্করপুর হাইস্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক সুশীলকুমার আড়ি বলছেন, ‘‘উদ্যোগটা ভাল। তবে তার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিকাঠামো ও পরিবেশ। তবেই এই নির্দেশের সাফল্য আসবে।’’ তাঁর দাবি, খেলাধুলার জন্য মাঠের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু অনেক স্কুলে খেলার মাঠ না থাকায় খেলাধুলার সমস্যা হয়। স্কুলের শিক্ষকের শূন্যপদ থাকায় শারীরশিক্ষার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অন্য ক্লাস নিতে হয়। সেই শূন্যপদ পূরণ না করে এই নির্দেশ কার্যকর হলে পড়াশোনায় সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সুশীলবাবু বলেন, ‘‘যে দিন থেকে শারীরশিক্ষা ঐচ্ছিক বিষয় হয়েছে সে দিন থেকে পড়ুয়াদের মধ্যে এই বিষয়ে অনীহা দেখা দিয়েছে। আমাদের তো শারীরশিক্ষার পাশাপাশি অন্য ক্লাসও করতে হয়।’’

বহরমপুরের একটি স্কুলের শারীরশিক্ষার এক শিক্ষক আবার বলছেন, ‘‘অন্য বিষয়ের ক্লাস নিতে নিতে আমরা নিজেদের বিষয়টাই ভুলতে বসেছি। শারীরশিক্ষার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিয়ে শুধু খেলাধুলার ক্লাস করালেই পডুয়াদের উপকার হবে।’’

স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার মানোন্নয়ন নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর রাজ্যের শিক্ষা দফতরের শারীরশিক্ষা বিভাগ থেকে এক নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ওয়েস্ট বেঙ্গল কাউন্সিল ফর স্কুল গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস, ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল ফর স্কুল গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে বিভিন্ন স্তরে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। শারীরশিক্ষার শিক্ষক-শিক্ষিকারা হলেন এই প্রতিযোগিতার প্রধান কর্মশক্তি। খেলাধুলার সময় পরীক্ষা হলে যারা খেলাধুলায় যোগ দিয়েছিল তাদের বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি স্কুলকে অন্ততপক্ষে দু’টি প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগী পাঠাতে হবে। শারীরশিক্ষার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মূলত স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষার কাজে লাগাতে বলা হয়েছে।

বহরমপুরের হিকমপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শারীরশিক্ষার শিক্ষক-শিক্ষিকা শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষার ক্লাস করুন, এটা আমরাও চাই। কিন্তু আমাদের মতো যে সব স্কুলে শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে সেখানে কী হবে?’’

এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক দুলাল দত্ত বলেন, ‘‘শারীরশিক্ষার শিক্ষকদের স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষার ক্লাস করানোর জন্যই নিয়োগ করা হয়েছে। তাার জন্য নির্দেশ দেওয়ার কী প্রয়োজন? আমরা মনে করি, এই নির্দেশিকার ফলে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে শারীরশিক্ষার শিক্ষকদের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’’ তাঁর দাবি, শিক্ষক থেকে অন্য কর্মীর অভাবে প্রধান শিক্ষককে করণিকের কাজও করতে হয়। রসায়নের শিক্ষককে কন্যাশ্রীর নানা কাজ করতে হয়। স্বাভাবিক ভাবে শারীরশিক্ষার শিক্ষকেরাও স্কুলের স্বার্থে, পড়ুয়াদের স্বার্থে অন্য ক্লাস করেন।

ওয়েস্ট বেঙ্গল তৃণমূল সেকেন্ডারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি শেখ মহম্মদ ফুরকান বলছেন, ‘‘সরকারের নির্দেশিকাকে আমরা আগেই স্বাগত জানিয়েছি। এতদিন শারীরশিক্ষা সে ভাবে গুরুত্ব পায়নি। আর তাকে গুরুত্ব দিতে এই নির্দেশিকা। সরকার দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ করবে। ফলে শিক্ষকের সমস্যা হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন