দুখির অফিস, বাকি রেনি-ডে

এমন এক হাড়-কনকনে ঠান্ডা বৃর দিনে অফিস গিয়ে দিনটা কিছুতেই নষ্ট করতে ইচ্ছে করছিল না তাঁর। রান্না ঘর থেকে খিচুড়ির গন্ধ ভেসে আসতেই মন চনমনে হয়ে ওঠে। নিদের মনেই বলে ওঠেন— “এই না হলে জাঁকিয়ে শীত পড়া!”

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০৪
Share:

পেতাই-এর ঝাপটায় ভিজে শীত। মুড়ি দিয়ে গৃহহারা। মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

রাতেই টেনে নিয়েছিলেন কম্বল। সোমবার সকালে সেই কম্বলের ভিতরে পা ডুবিয়ে সনাতন হাঁক পাড়লেন— “আজ আর অফিস যাব না। খিচুড়ি হোক দুপুরে।” তার পর বেশ কিছুক্ষণ কম্বলের ভিতরে ওম নিয়ে, আড়ামোড়া ভেঙে বেরিয়ে পড়লেন বাজারে।

Advertisement

এমন এক হাড়-কনকনে ঠান্ডা বৃষ্টির দিনে অফিস গিয়ে দিনটা কিছুতেই নষ্ট করতে ইচ্ছে করছিল না তাঁর। রান্না ঘর থেকে খিচুড়ির গন্ধ ভেসে আসতেই মন চনমনে হয়ে ওঠে। নিদের মনেই বলে ওঠেন— “এই না হলে জাঁকিয়ে শীত পড়া!”

এ শুধু সনাতনের কথা নয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা হাওয়ার পাশাপাশি ঝিরঝিরে বৃষ্টি দেখে অনেকেই আজ কর্মস্থলে যাওয়ার মন নেই। কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিক হওয়ায় বেশির ভাগই সে ঝুঁকি নিতে পারেননি। সেই সব দুখিদের কানে-মাথায় চাদর মুড়ি দিয়ে ছাতা হাতেই তাঁদের কর্মক্ষেত্রে ছুটতে হয়েছে।

Advertisement

একে শীত, দুয়ে বৃষ্টি! এমন মহা সংযোগ কম-বেশি উপভোগ করেছেন স্কুল পড়ুয়া থেকে চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী, দোকানদার— সকলেই। এই দিন অফিসকাছারিতে কাজের জন্য লোকজনের তেমন ভিড় না হলেও কর্মীদের উপস্থিতি ছিল প্রায় একই। তবে বেশির ভাগ স্কুল, কলেজে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল অন্যদিনের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে কম। অনেকেই আবার ঠান্ডা আর বৃষ্টিতে শরীরখারাপ হওয়ার আশঙ্কায় ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাননি। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা অঙ্কিতা চক্রবর্তী যেমন বলছেন, “এই সময় বৃষ্টিতে ভিজলে আর দেখতে হবে না! জ্বর অবধারিত। তার চেয়ে বাচ্চাকে এক দিন স্কুলে না পাঠানোই ভাল।”

তবে এই অকাল বৃষ্টিতে অনেকেই বেশ খুশি। সামনেই বড় দিনের উৎসব। তখন চুটিয়ে ঠান্ডা না পড়লে কী করে চলে! সে ভাবে শীত না পড়ায় গরম জামা আলমারি থেকে বের করেও গায়ে চাপাতে পারছিলেন না অনেকেই। এ বার সুযোগ এসেছে।

বছর সত্তরের অরুণ সরকার কানের উপরে হনুমান টুপি টানতে টানতে বলেন— “হুঁ হুঁ, বাবা! ঠান্ডা তো এখনও পরেনি। রোদটা উঠতে দিন, তার পর দেখবেন মজা। আমার তো মনে হচ্ছে, এ বারের শীত আগের সব রেকর্ড ভেঙে দেবে।”

ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে চায়ের দোকানের সামনে ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে তাঁর কথায় সায় দেয় কেউ কেউ। তবে এরই মধ্যে খুকখুক কেশে এলাকার প্রবীণ অরুণ রায় বলেন, “সবই তো বুঝলাম। কিন্তু ঠান্ডায় যে বড় শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়!”

এ দিন প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় তেমন ভাবে বের হননি কেউ-ই। দুপুরের পর শহরের রাস্তাঘাট আরও ফাঁকা হয়ে যায়। সকালের দিকেও বাজার তেমন জমেনি। একটু বেলার দিকে খরিদ্দারের অভাবে সস্তায় আনাজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন রাস্তার পাশে বসা ছোট-ছোট ব্যবসায়ীরা। মাছের বাজারেও প্রায় একই অবস্থা।

কৃষ্ণনগরের পাত্রবাজারের এক মাছ ব্যবসায়ী তারক হালদার বলেন, “শীতের দিনে বৃষ্টিতে মাছের বাজারে ভিড় কমে যায়। তা-ও আবার শীতের প্রথম বর্ষা। মানুষ আজ খিচুড়ি, ডিম ভাজায় মজেছে নির্ঘাত!”

কথাটা যে মিথ্যে নয়, তার প্রমাণ— এ দিন অলিতে-গলিতে ভেজা বাতাসে ভেসে বেড়ানো খিচুড়ি আর ডিমভাজার গন্ধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন