দিল্লির কোর্টে জবানবন্দি বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীর

রানাঘাটের কনভেন্ট স্কুলে নিগ্রহের দিন সাতেক পরেই বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনী বাংলা ছেড়ে দিল্লি চলে গিয়েছিলেন। আর সেই নির্যাতনের ২৫ দিনের মাথায়, সোমবার দিল্লিরই পাটিয়ালা হাউস আদালতে গোপন জবানবন্দি দিলেন তিনি। এ দিন বিকেলে এমনটাই দাবি করেছেন সিআইডি-কর্তারা। ওই মামলার দু’জন সাক্ষী এ দিনই গোপন জবানবন্দি দেন রানাঘাট আদালতে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, শুক্রবার সিআইডি-র প্রতিনিধিরা দিল্লি গিয়ে ওই সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে কথা বলেন। তবে আদালতে গোপন জবানবন্দির ব্যাপারে ওই বৃদ্ধা সিআইডি-কে সম্মতি দেন সোমবার সকালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪০
Share:

রানাঘাটের কনভেন্ট স্কুলে নিগ্রহের দিন সাতেক পরেই বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনী বাংলা ছেড়ে দিল্লি চলে গিয়েছিলেন। আর সেই নির্যাতনের ২৫ দিনের মাথায়, সোমবার দিল্লিরই পাটিয়ালা হাউস আদালতে গোপন জবানবন্দি দিলেন তিনি। এ দিন বিকেলে এমনটাই দাবি করেছেন সিআইডি-কর্তারা। ওই মামলার দু’জন সাক্ষী এ দিনই গোপন জবানবন্দি দেন রানাঘাট আদালতে।

Advertisement

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, শুক্রবার সিআইডি-র প্রতিনিধিরা দিল্লি গিয়ে ওই সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে কথা বলেন। তবে আদালতে গোপন জবানবন্দির ব্যাপারে ওই বৃদ্ধা সিআইডি-কে সম্মতি দেন সোমবার সকালে। তার পরেই তাঁর জবানবন্দি নেওয়ার জন্য পাটিয়ালা হাউস আদালতে আবেদন করেন তদন্তকারী অফিসার। বিকেলে আদালতের নির্দেশে এক জন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেন ওই বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনী।

১৩ মার্চ গভীর রাতে রানাঘাটের একটি কনভেন্ট স্কুলে লুঠপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। ওই স্কুলের বয়োজ্যেষ্ঠ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণও করা হয় বলে অভিযোগ। তার পরে কয়েক দিন রানাঘাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন অত্যাচারিত সন্ন্যাসিনী। কিন্তু হামলার ঘটনার সাত দিন পরে তিনি এ রাজ্য ছেড়ে দিল্লিতে চলে যান।

Advertisement

তার পর থেকে দিল্লির মন্দির মার্গ থানা এলাকার অন্তর্গত একটি বাড়িই ওই সন্ন্যাসিনীর ঠিকানা বলে সিআইডি সূত্রের খবর। সিআইডি-র ডিআইজি (অপারেশন) দিলীপ আদক জানান, তদন্তের স্বার্থেই বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীর গোপন জবানবন্দি এ দিন আদালতে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর আগেই রানাঘাট কাণ্ডে ধৃত এবং পলাতক দুষ্কৃতীদের ছবি ও স্কেচ তাঁকে দেখিয়েছিলেন গোয়েন্দারা।

রানাঘাট আদালতে এ দিন যে-দু’জনের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে, তাঁদের নাম-পরিচয় জানাতে চায়নি সিআইডি। শুধু জানানো হয়েছে, তাঁরা রানাঘাট মামলার সাক্ষী এবং নদিয়ার পড়শি জেলার লোক।

সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন দুষ্কৃতী সে-রাতে ধর্ষণ করেছিল, তা জানার জন্য সন্ন্যাসিনীর ডিএনএ পরীক্ষা হবে। গোয়েন্দারা গত শনিবার সন্ন্যাসিনীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তার সঙ্গে ঘটনাস্থলে পাওয়া রক্তের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা হবে। এটা তদন্তের একটা পর্যায়। একই ভাবে চাদরে লেগে থাকা রক্ত ও বীর্যের নমুনার সঙ্গে অভিযুক্তদের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হতে পারে।

রানাঘাটের স্কুলে লুঠপাট ও ধর্ষণের ঘটনায় সরাসরি অভিযুক্তদের মধ্যে এ-পর্যন্ত মাত্র দু’জন ধরা পড়েছে। গোপাল সরকার ও মহম্মদ সালিম শেখ। সন্দেহভাজন হিসেবে লুধিয়ানা থেকে আট জনকে ধরা হলেও তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বালুরঘাটের একটি ডাকাতির ঘটনায়। মিলন সরকার নামে এক বাংলাদেশি দুষ্কৃতী রানাঘাট কাণ্ডের মূল পাণ্ডা বলে সিআইডি-র অভিযোগ। সে পলাতক। গোয়েন্দারা জানান, মিলন সারা দেশে ২০-২২ জনের একটি দল চালায়। এবং ওই দুষ্কৃতীরা সকলেই বাংলাদেশের। তারা পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি এবং অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। দুষ্কর্মের পরে এ রাজ্যের হাবরা-সহ ছ’টি জায়গায় তারা আশ্রয় নিত বলে গোয়েন্দারা তদন্তে জানতে পেরেছেন।

সিআইডি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘মিলন পুরো দলটিকে নিয়ন্ত্রণ করত। রানাঘাটের স্কুলে হানা দেওয়ার আগে ওই দলের আট দুষ্কৃতী ৮ মার্চ বালুরঘাটে একটি ডাকাতি করেছে। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই দলের সেই দুষ্কৃতীদের লুধিয়ানায় গ্রেফতার করা হয়।’’ এ দিন ওই ডাকাতির ঘটনার তদন্তভারও নিয়েছে সিআইডি। ভবানী ভবন সূত্রের খবর, লুধিয়ানায় ধৃত আট বাংলাদেশিকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। মিলনের সঙ্গে ফোনে ওই আট জনের কথাবার্তার প্রমাণও মিলেছে। সিআইডি-র দল লুধিয়ানায় গিয়ে ইতিমধ্যেই ধৃতদের জেরা করেছে।

রানাঘাট কাণ্ডে পলাতক অভিযুক্তদের মধ্যে চার জনের নামে সোমবার লুক-আউট নোটিস জারি করেছে সিআইডি। তদন্তকারীরা জানান, ওই চার জন বাংলাদেশি। বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই লুক আউট নোটিস জারি করে হয়েছে। তবে পলাতক মিলনের পাসপোর্ট না-থাকায় তার নামে লুক আউট নোটিস জারি করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন