রাস্তায় চাঁদার জুলুম চলছেই, চুপ পুলিশ

বহরমপুর আছে বহরমপুরেই! ফের চাঁদার জন্য জুলুম। ফের প্রহৃত লরিচালক। এবং ফের অভিযোগের তির শাসক দলের লরি সংগঠনের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪১
Share:

বহরমপুর আছে বহরমপুরেই!

Advertisement

ফের চাঁদার জন্য জুলুম। ফের প্রহৃত লরিচালক। এবং ফের অভিযোগের তির শাসক দলের লরি সংগঠনের বিরুদ্ধে।

শনিবার রাতে বহরমপুর পঞ্চাননতলা রেলগেটের কাছে মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোডে বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য লরি চালকদের কাছে চাঁদা আদায় করছিলেন তৃণমূলের লরি শ্রমিক সংগঠনের লোকজন। তাঁদের দাবি মতো চাঁদা দিতে রাজি হননি দুই লরি চালক। অভিযোগ সেই ‘অপরাধে’ ওই দুই চালককে লাঠি, রড ও বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। খসড়াডাঙার নাজমূল হোসেন ও রেজিনগরের শরিফুল শেখ নামে ওই দুই চালক গুরুতর জখম হয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

ওই ঘটনার প্রতিবাদে মধুপুর-বিষ্ণুপুর রোডের উপরে লরি দাঁড় করিয়ে রাখেন চালকেরা। ফলে ব্যাপক যানজটে নাজেহাল হয় শহর। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। রবিবার সকাল থেকে ওই রাস্তায় পুলিশ টহল দিচ্ছে। বহরমপুরের আইসি শৈলেনকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় পুলিশ মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুজোর আগে ফি বছরই এমন কাণ্ড ঘটে। আর ভাঙা রেকর্ডের মতো পুলিশ একই কথা বলে চলে। অভিযুক্তরা আর ধরা পড়ে না।

আগে বহরমপুরের পঞ্চাননতলা রেলগেটের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে দুটো বিশ্বকর্মা পুজোকে ঘিরে আইএনটিইউসি এবং সিটু’র মধ্যে চলত প্রতিযোগিতা। রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পরে ওই রেলগেটের পূর্বপাড়ে ২০১৪ সাল থেকে তৃণমূলের ছ’চাকা লরি সংগঠন বিশ্বকর্মা পুজো শুরু করে। নতুন করে ২০১৫ সালে বিষ্ণুপুর কালীবাড়ি মোড়ে তৃণমূলের দশ চাকা লরি সংগঠন বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন করে। অভিযোগ, শাসক দলের পুজোর সংখ্যা যেমন প্রতি বছর বাড়ছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাঁদা তোলার বহরও। আর পুলিশ সব জেনেও চুপ করে থাকে। বিশ্বকর্মা পুজোর প্রায় দেড় মাস আগে থেকে প্রতি বছর ওই চাঁদা আদায় শুরু হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

এমনিতেই পঞ্চাননতলা মোড় থেকে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তায় যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। তার উপরে লরি দাঁড় করিয়ে জোর-জবরদস্তি চাঁদা আদায়ের ফলে বহরমপুর পঞ্চাননতলা মোড় থেকে বিষ্ণুপুর মোড় পর্যন্ত মাত্রাতিরিক্ত যানজট শুরু হয়েছে। যানজটের প্রভাব আছড়ে পড়ছে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড ছাড়িয়ে ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ের খাগড়াঘাট রেলগেট পর্যন্ত। অন্য দিকে, পঞ্চাননতলা মোড় ছাড়িয়ে চুঁয়াপুর-ভাকুড়ি এবং বহরমপুর-জলঙ্গি রাজ্য সড়কের কদবেলতলা হয়ে বানজেটিয়া পর্যন্ত সেই যানজটের রেশ থাকে। সব মিলিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন নিত্যযাত্রী, পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

তবে এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। চাঁদার জুলুমের অভিযোগ উঠেছে বাম, ডান সব শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধেই। চাঁদা আদায় করতে গিয়েই ২০১৫ সালের ৩০ অগস্ট এক লরি চালকের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে। তারও আগে, ২০১৪ সালে চাঁদা আদায়কারীদের বাধা দিতে গিয়ে বহরমপুর থানার এক সাব-ইন্সপেক্টর ও পুলিশ কর্মীরা প্রহৃত হয়েছিলেন। তারপরেও চাঁদার জুলুম বন্ধ করতে পারেনি পুলিশ।

এবারে বিশ্বকর্মা পুজোয় আইএনটিইউসি’র বাজেট তিন লক্ষ টাকা, সিটু’র আড়াই লক্ষ টাকা, তৃণমূলের পুজোর বাজেট পাঁচ লক্ষ টাকা। চাঁদা আদায় প্রসঙ্গে সিটু অনুমোদিত জনপথ মজদুর পরিবহন ইউনিয়ন বা আইএনটিইউসি অনুমোদিত মুর্শিদাবাদ জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি, তৃণমূলের লোকজন জোর-জোবরদস্তি করে প্রতি দিন চাঁদা তুলছে বলেই তাঁদের সদস্যদের বাধা দেওয়া যাচ্ছে না।

আইএনটিইউসি অনুমোদিত মুর্শিদাবাদ জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক আনন্দগোপাল রায় বলেন, ‘‘শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা জোর করে চাঁদা তুলছে আর পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে থাকছে। পুলিশ প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকায় চাঁদা তোলার তেজ বাড়াচ্ছে তৃণমূল। তখন আমাদের সদস্যরাও তো হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারছে না।’’

জেলা তৃণমূল ট্রাক ড্রাইভার অ্যান্ড হেল্পার ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক তাপস বিশ্বাস বলেন, ‘‘সিটু এবং আইএনটিইউসি’র কাছ থেকে আমরা চাঁদা তোলা শিখেছি। সকলে যদি চাঁদা তোলা বন্ধ করে আমরাও চাঁদা তোলা বন্ধ করে দেব। পুলিশ আগে ওই দুটি সংগঠনের চাঁদা তোলা বন্ধ করুক।’’ সে কথা কি পুলিশের কানে পৌঁছচ্ছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন